কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নঈম উদ্দীন সেন্টুকে (৭০) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফিলিপনগর ইউপি কার্যালয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি নিয়মিত পরিষদে যেতেন। আজ সকালেও অন্যদিনের মতো বাড়ি থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদে যান চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু। পরে তিনি নিজ কার্যালয়ে বসে দাপ্তরিক কাজকর্ম করছিলেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ এবং দুইজন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এদিকে চেয়ারম্যানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপরও চড়া হয় উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা যায়, নঈমুদ্দিন সেন্টু এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় তাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখা যায়। এর আগেও তিনি এই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী গ্রাম পুলিশ সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, তিনি চেয়ারম্যান কার্যালয়ের বাইরে বসে ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের পেছনের জানালা দিয়ে চার পাঁচ রাউন্ড গুলি চালায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। গুলির শব্দ শুনে তিনি প্রাণভয়ে পরিষদের একটি কক্ষে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখেন চেয়ারম্যান সেন্টুর গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ ফ্লোরে পড়ে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী জানান, হত্যাকাণ্ড শেষে দুর্বৃত্তরা পদ্মা নদী দিয়ে ট্রলার যোগে পালিয়ে গেছে।

নিহত চেয়ারম্যানের জামাই হাসিবুর রহমান বিজয় বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তার শ্বশুরকে এলাকার একটি গোষ্ঠী হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।

নিহতের ছেলের বউ শামীমা আক্তার বলেন, বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে বের করার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ করছি।

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, ‘ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নইমুদ্দিন সেন্টুকে (৬০) পূর্বে বিএনপির রাজনীতি করতেন বর্তমান তিনি রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় ছিলেন।’

এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের নিজ অফিস কক্ষে বসে কাজ করছিলেন। এমন সময় আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে প্রথমে জানালা দিয়ে চেয়ারম্যানকে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এরপর চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে আবারও গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।’

ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার আগে পেছনে একাধিক গুলি করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।