গাজীপুরে ভিক্ষা করে জমানো টাকা দিয়ে নেশার জন্য কেনা ঘুমের ট্যাবলেটের ভাগ না দেয়ায় ক্ষিপ্ত কাঁচের বোতল ভেঙ্গে ছোট ভাইকে হত্যা করে লাশ মহাসড়কের বিভাজকে ফেলে রাখে শারিরীক প্রতিবন্ধি সৎ ভাই। এ ঘটনায় প্রতিবন্ধি সৎ ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জয়দেবপুর থানায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম।
নিহত আবু বকর (২৫) ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার গরজা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল হালিম (৩৮) নিহতের বড় সৎভাই ও শারিরীক প্রতিবন্ধি (এক পা পঙ্গু)। এদের মধ্যে প্রতিবন্ধি হালিম এলাকায় ভিক্ষা করতো ও আবু বকর বোতল কুড়াতো (টোকাই)। তারা গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজের উপর রাতে ঘুমাতো। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরে আস তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানান, প্রথম স্বামী আরুল্লা’র মৃত্যুর পর হালিমের মা হাসিনা বেগম ময়মনসিংহের আব্দুল জলিলকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। হাসিনা দ্বিতীয় সংসারের সন্তান নিহত আবু বকর। গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে জয়দেবপুর থানার বাঘেরবাজার এলাকায় মন্ডল গার্মেন্টসের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সড়ক বিভাজক থেকে আবু বকরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় নিহতের বোন রিনা বেগম থানায় মামলা দায়ের করেন। মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে জয়দেবপুর থানার পুলিশের কয়েকটি টিম তদন্ত কাজ শুরু করে এবং বাঘের বাজার এলাকায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে। ওই ফুটেজের তথ্যের ভিত্তিতে বৃহষ্পতিবার ভোররাতে বাঘেরবাজার এলাকা থেকে হালিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হালিম ছোটভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হালিম জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারা দুই ভাই ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর আসে। তার সৎ ভাই আবু বকর ভাঙ্গাড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করতো। সে জুয়া ও নেশা আসক্ত ছিল। প্রায়শঃ সে হালিমের কাছ থেকে ভিক্ষা করে জমানো টাকা ছিনিয়ে নিত এবং মারধর করতো। ওইদিন রাত ৮টার দিকে হালিম বাঘের বাজার ওভারব্রিজের উপরে ভিক্ষা করার সময় আবু বকর নেশাদ্রব্য কেনার জন্য তার নিকট থেকে ১শ টাকা নিয়ে চলে যায়। দীর্ঘ সময়েও ফিরে না আসায় ভোররাতের দিকে হালিম তার সৎ ছোটভাই আবু বকরকে খুঁজতে বের হয়ে দেখে সে স্থানীয় মন্ডল ইন্টিমেন্টস পোশাক কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ডিভাইডারের উপর গাম জাতীয় নেশা সেবন করছে। এসময় ছোট ভাই আবু বকর প্রতিবন্ধি ভাই হালিমের কাছে নেশা করার জন্য আরো টাকা চায়। টাকা দিতে না চাইলে হালিমকে মারধর করে আবু বকর। এর একটু পরেই আবু বকর নেশার ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এসময় হালিম পাশে থাকা ভাঙ্গা কাঁচের বোতল দিয়ে আবু বকরের বুকে ও পাঁজরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে। পরে ছোটভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে ফুট ওভার ব্রিজের উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছোটভাই আবু বকরের লাশ উদ্ধার করে।
জয়দেবপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, মামলার তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, দুই সৎভাই হালিম ও আবু বকর একই মায়ের সন্তান। তারা দু’জনই নেশা করতো। ভিক্ষা করে জমানো টাকা হালিমের কাছ থেকে আবু বকর প্রায়শঃ ছিনিয়ে নিত এবং মারধর করতো। ঘটনার রাতে আসামী হালিম নেশা জাতীয় ঘুমের ২০টি ট্যাবলেটের ভাগ না পেয়ে রাগে ক্ষোভে পাশে থাকা কাঁচের ধারালো ভাঙ্গা বোতল দিয়ে আঘাত করে তার ভাই আবু বকরকে হত্যা করে।
সংবাদ সম্মেলনে থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলামসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।