জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার অর্জিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে ইন্তেকাল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে শুধু দেশকে নয় তার দলকেও (আওয়ামী লীগ) ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার দল আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দল পরিচালনার মত কিংবা দলের হাল ধরার মত একটা লোকও আওয়ামী লীগে নাই বা ছিল না। কারণ আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চর্চা নাই। গনতন্ত্র আওয়ামী লীগ বুঝে না এবং গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তারা ব্যক্তি বা পারিবারের মধ্যে রাজনীতি সীমাবদ্ধ রেখেছে। কেবলমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই গণতন্ত্রের চর্চা আছে। জামায়াতে ইসলামী গনতন্ত্র বুঝে এবং গণতন্ত্র বিশ্বাস করে সেজন্যই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব অন্য দলগুলোর মত ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দলটির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করে এবং মিথ্যা মামলায় অসংখ্য নেতৃবৃন্দকে কারাগারে বন্দী করেও জামায়াতে ইসলামীকে শেষ করা যায়নি। এতে মাথা খারাপ হয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে ফ্যাসীবাদী আওয়ামী লীগ, কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের মানুষ অন্তর থেকে ভালোবাসে যার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগকেই দেশের মানুষ ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে দেশের মালিক আর জনগণকে তাদের দাস মনে করেছে। তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেই খুন, গুম করেছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে জানিয়ে জনগণকে মিথ্যে গল্প শুনিয়েছে। অথচ দেশের কোনো ব্যাংকে টাকা নেই। সব টাকা তারা বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। বৈদেশিক ঋণের চাপে দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যাচ্ছে। তাদের সকল অপকর্মের বিচার থেকে বাঁচতেই তারা পালিয়ে গেছে। দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীর ওপর বিশ্বাস আর আস্থা রেখে জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশ পরিচালনের দায়িত্ব প্রদান করে তবে দেশে থেকে পাচার হওয়া সকল সম্পদ দেশে ফিরে আনা হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে।

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হলে ছাত্র-জনাতর এই বিপ্লব সফল হবে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থবহ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে দু’টি। প্রথমত তারা কী কী সংস্কার করবে, কিভাবে সংস্কার করবে এবং কতদিনে সংস্কার করবে। আরেকটি হচ্ছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ। যারা জাতিকে বিভাজন করতে চায় তারা জাতির দুশমন উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতীয় স্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রসঙ্গ টেনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কেউ কেউ নিজ নিজ দলের শহিদদের হিসাব দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী এই হিসাব দিয়ে শহিদদের দলীয় সম্পদ বানাতে চায় না। জামায়াতে ইসলামী মনে করে শহিদরা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। শহিদদের টাকা দিয়ে মাপা বা মূল্যায়ন করা যাবে না। শহিদদের প্রতি ফোঁটা রক্ত অমূল্য। তবে শহিদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে সম্মানজনক।

এই সহযোগিতা কোনো দয়া নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় মূল্যায়ন। তিনি শহিদ পরিবার থেকে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একজন করে সরকারি চাকরি দেয়ার দাবি জানান। এবং আহতদের কর্মক্ষম করে তোলার পাশাপাশি তাদের পাশে থাকা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। খুনি হাসিনা দু’দিন আগেও বলেছে হাসিনা পলায় না! অথচ দু’দিন পরে শুধু পলায়নি, সব নিয়ে পালিয়েছে। এক শ্রেণির আইনজীবী শেখ হাসিনার অপশাসনে মদদ দিয়ে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনার সাথে সাথে সেই আইনজীবীদেরও বিচার হতে হবে।

তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আইনজীবীদের ভূমিকা প্রয়োজন। সেজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে প্রমাণিত হয় জুলুম করে, অত্যাচার করে, জনগণের কণ্ঠরোধ করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। একটি সরকার পরিবর্তনের জন্য কেবল আগস্ট বিপ্লব সংগঠিত হয়নি। এই বিপ্লব রাষ্ট্রের সকল বৈষম্য দূর করার বিপ্লব, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লব।

সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সুখি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে চায়। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়।

যাতে ১৮ কোটি মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্বে একটি কুচক্রী মহল এখনো অপপ্রচার চালাচ্ছে, অতিতের মত জামায়াতে ইসলামী দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সকল অপপ্রচার রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও মৌলক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীরা যে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে তা চূড়ান্তরূপ নেয়া পর্যন্ত সকলকে কার্যকর ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসেন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।

আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এস.এম কামাল উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সুপ্রীম কোর্ট বার শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, ঢাকা জজকোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, অ্যাডভোকেট খন্দকার রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম রেজা, অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট আবু বক্কর ছিদ্দিক, অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ হোসেনসহ অন্যান্য আইনজীবী নেতারা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি