গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পতনের আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট রাতে সাকিবের নামে একটি হত্যা মামলা হয়। ৫ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ডিএমপির আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলায় দায়ের হয়। সাকিব আল হাসানকে মামলার ২৮ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি করা হয়।

যদিও গত ৫ আগস্ট রুবেল নিহত হওয়ার সময় সাকিব কানাডায় ছিলেন। সে সময় কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলছিলেন তিনি। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরো সময়েই দেশে ছিলেন না সাকিব। তাই, সাকিবের নামে এই মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। সে সময় হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় জাতীয় দল থেকে সাকিবকে বাদ দিয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিসিবিকে আইনি নোটিশ পাঠান একজন আইনজীবী। তখন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সাকিবের খেলতে কোনো বাধা নেই।

বিষয়টি নিয়ে তখন অন্তর্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘সাকিবের বিরুদ্ধে শুধু মামলা হয়েছে। তারপরও এটা পুলিশ-প্রশাসনের ব্যাপার। আমরা যতটুকু বলার, বলার চেষ্টা করেছি। মামলা বা এফআইআর হওয়া মানে তো গ্রেপ্তার না। আমার বিশ্বাস, আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে যাতে অতি উৎসাহী হয়ে গ্রেপ্তার না করতে যায়।’

বর্তমানে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে সেদেশে আছেন সাকিব। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে দলের অন্য সবাই দেশে ফিরলেও সাকিব চলে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে সারের হয়ে একটি কাউন্টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। অনেকেরই ধারণা, মামলার কারণে দেশে ফেরেননি সাকিব।

আবারও সাকিবের গ্রেপ্তার বিষয়ে কথা বলেছেন আসিফ নজরুল। গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি বাংলা সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিবের মামলা প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘মামলার কারণে সাকিব কিংবা জায়েদ খান; তাদের কারো সঙ্গে কি গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে? ঘটেনি। আমরা বারবার মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমরা পুলিশকে বলেছি, ‘‘আপনারা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, মামলাতে আপনি যে অভিযোগ আনছেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য কি না।’’ পুলিশের কাছ থেকে এবং আদালতের কাছ থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি, যারা মামলা করতে আসেন, সেখানেও (পুলিশের ওপর) চাপ থাকে।’

সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা ব্যক্তি করেছে, সরকার করেনি বলেও মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা, ‘যখন কেউ মামলা করে, মামলা করাটা মানুষের অধিকার। ব্যক্তিগতভাবে একজন মামলা করে দিলো। এই মামলাগুলো পুলিশ করেনি, পুলিশ যদি করে তাহলে বুঝবেন এটার সঙ্গে রাষ্ট্র জড়িত আছে। এ মামলাগুলো ব্যক্তিগতভাবে করা হয়েছে।’

আসিফ নজরুল আগের মতো আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘একটা জিনিস সবাইকে বলার চেষ্টা করেছি, এফআইআর মানেই গ্রেপ্তার না। কিছু কিছু মানুষ যখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে, এই মামলা তার নামে হওয়ার কথা না। আমরা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সঙ্গে কাজ করি। আমরা আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করি যে, পুলিশ বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না পেলে আপনাদের গ্রেপ্তার করবে না।’