গাজীপুরে বেতন ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশসহ বিভিন্ন দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে পোশাক কারখানাসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। রবিবার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় অবরোধ ও গাড়ি ভাংচুর করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার পলমল গ্রুপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে হাজিরা বোনাস বাড়িয়ে নূন্যতম ১হাজার টাকা ও রাত্রিকালীন ভাতা ১শ’ টাকা বৃদ্ধি, মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি, অর্ধ বেলা ছুটি অথবা দুইঘন্টা গেইট পাশ নিলে হাজিরা বোনাস কেটে না নেওয়া এবং অসুস্থ হলে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে বিশ্রামে না রেখে ছুটি দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবী জানিয়ে আসছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। রবিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে ওই দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকে পড়ে প্রায় ৮/৯ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচন্ড গরমের মাঝে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা পর সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউল কবীর খোকন বলেন, কারখানায় প্রবেশে যেসব শ্রমিকের কোনো লেট নেই এবং নিয়মিত কাজ করে, তাদেরকে প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা অতিরিক্ত হাজিরা বোনাস দিচ্ছে বিভিন্ন পোশাক কারখানা। আমি মনে করি এটা শমিকদের অধিকার এবং যৌক্তিক দাবী।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (বাঘের বাজার জোন) সুমন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকেরা ৯দফা দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি বাদে (মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি প্রদান) অন্য ৮টি দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়কের উপর থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে প্রায় ৪ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে, গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন জানান, রবিবার সকাল ৮ টায় থেকে গাজীপুর মহানগরীর খাইলকুর এলাকার এম এম ফ্যাশন এন্ড কম্পোজিট লিমিটিডের তিন শতাধিক শ্রমিক কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়। আধা ঘন্টা পর থেকে তারা আগষ্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ পালন করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

অপরদিকে একইদিন কালিয়াকৈরে বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। এসময় তারা কালিয়াকৈরের মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় পৌণে এক ঘন্টা অবরোধ করে ও গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় প্রায় পৌণে এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী, চালক ও পথচারীদের।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিেিটড কারখানায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক কাজ করে। সারা দেশের সকল শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হলেও ওই কারখানার শ্রমিকদের এখনো বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষদের সাথে একাধিকবার শ্রমিকদের বৈঠক হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপ্রেক্ষিতে রবিবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় পৌণে এক ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর-১ শিল্প পুলিশর ওসি (কালিয়াকৈর) নিতাই চন্দ্র জানান, খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকদের ১২ দফা দাবীগুলো হলো- সরাকারি গ্রেড অনুযায়ী সর্বনি¤œ বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করতে হবে, বাৎসরিক এবং সরকারি ছুটি প্রদান করতে হবে, জমাকৃত অর্জিত ছুটির টাকা বছরের প্রথম মাসে পরিশোধ করতে হবে, যথা সময়ে বাৎসরিক এনক্রিমেন্ট দিতে হবে, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ দিতে হবে, কাজ করা অবস্থায় কোনো শ্রমিক অসুস্থ বা কোনো ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে, চাকরির বয়স ৬ মাস হলে ঈদ বোনাস দিতে হবে, কোনো কারণে চাকুরিচ্যুতি এবং বহিষ্কার করা হলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে, প্রতি ফ্লোরে একজন করে শ্রমিক নেতা দেিত হবে, রাট ৮ টার পর কাজ করালে টিফিন বিল দিতে হবে, অন্দোলনরত শ্রমিকদের মামলা, হামলা হয়রানি বা চাকুরিচ্যুতি করা যাবে না এবং কারখানার আয়োজনে প্রতি বছর পিকনিকের ব্যবস্থা করতে হবে।