গাজীপুরের পোশাক শিল্পসহ কারখানাগুলোতে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। সোমবারেও জেলার বিভিন্নস্থানে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন ভাতা ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পৃথকভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কয়েক ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এতে মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কালিয়াকৈরের তিন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, হাজিরা বোনাস ও নাইট বিল বৃদ্ধি, টিফিনের মান উন্নতসহ ১২ দফা বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে গত কয়েকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। ওই দাবি মেনে না নেয়ায় সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মিছিল সহকারে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর এসে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় ওই মহাসড়কের উভয়দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনঢ় থাকে। পরে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের প্রায় সবক’টি দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা সড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে শ্রমিকদের সকল দাবি মেনে নেওয়ার পর তারা দুপুর ১২ টার দিকে সড়ক থেকে সরে গেলে প্রায় চার ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এব্যাপারে ওই কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, শ্রমিকদের প্রায় সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, একইদিন সকালে মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকার এইচআরওয়ান ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করে। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় দুইঘন্টা পর বেলা ১১টার যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

অপরদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে এদিন সকালে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। এতে কিছু শ্রমিক কারখানায় প্রবেশ করে ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এসময় কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং কারখানা ভাংচুর চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের জোন-২ এর পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কয়েকজন শ্রমিক জোরপূর্বক কারখানার ভেতরে প্রবেশ করায় সেনা সদস্যরা তিনজনকে আটক করেছেন। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ওই কারখানাসহ স্থানীয় বক্তারপুর এলাকার ইকো নিট ও সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয় কর্তৃপক্ষ।