বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হওয়ার পরেও স্বৈরাচারের দোসররা দেশে রয়ে গেছে। বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। জনগণের প্রত্যাশা জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়া। বিগত ১৭ বছর সংগ্রাম করে সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে জনগণের কাজ যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। আবার কোনো স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায়। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্রকে অব্যাহত রেখেছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
গণতন্ত্রের পক্ষে সকল রাজনৈতিক দল, প্রতিটি মানুষকে সজাগ থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একইভাবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহযোগিতা করব। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে তাদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামী সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে। মানুষের পক্ষে কাজ করবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। বেশ সকল বিপদ কেটে যায়নি আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে সামনে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একটি সম্ভাবনাময় জাতি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মুক্তি হলেই সব কিছু মুক্তি হয়ে যাবে না। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা অর্থনৈতিক মুক্তি হতে হবে। জয় পেতে হলে আমাদের আন্দোলন কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তারেক রহমান বলেন, আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে আমরা যদি সঠিক মানুষগুলোর হাতে দেশ ও জাতি নেতৃত্ব তুলে দিতে সক্ষম হয়, বিদেশের মানুষকে যদি সুযোগ করে দিতে পারি তাহলে তাদের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে সঠিক স্থানে নিয়ে যেতে পারবে।
কিশোরগঞ্জ জেলাকে একটি সম্ভাবনাময় এলাকা বলে আখ্যায়িত করে তারেক রহমান বলেন, আজকে কিশোরগঞ্জের সমাবেশে অধিকাংশ মানুষ কিশোরগঞ্জের। ২-৪ জন অন্য এলাকার থাকতে পারেন। কিশোরগঞ্জকে সম্ভাবনা হিসেবে কিভাবে গড়ে তুলতে দুই একটা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তুলে ধরতে চাই। বোরো মৌসুমে আপনাদের এখানে প্রচুর ধান হয়। আপনারা কি জানেন আপনারা যে ধান উৎপাদন করেন তা সমগ্র বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ ধান উৎপন্ন হয় কিশোরগঞ্জে। যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় কৃষক ভাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে উৎপাদন ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। আর একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের হাওর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আমরা চিরদিন স্মরণ রাখব এবং পাশে থাকব। এক ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার পালিয়ে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৫-১৬ বছর ধরে গুম-খুন, হামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় এসেছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মধ্য দিয়ে। এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে রাজনৈতিক দলের। শতাধিক নেতাকর্মী গুম করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষ মামলা দিয়ে নির্যাতিত করা হয়েছে। এত দুর্নীতি, এত অপরাধ, গুম-খুন করার পর ৫ আগস্ট এই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে নেতাকর্মীরা শান্ত রয়েছে। শান্ত থেকেছে বলেই বাংলাদেশ কোনো কিছু ঘটেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা যে আশঙ্কা করেছিল সেটা ঘটে নাই। কারণ আমরা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করি আমরা মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করি।
গণসমাবেশে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেজ আলী মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম টিপু প্রমুখ।