ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যে সম্পূর্ণ শিষ্টাচার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ সোমবার নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে গত শনিবার ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে অমিত শাহকে উদ্ধৃতি করে উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সিধে করে দেওয়া হবে।’

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘বাংলাদেশে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বিশ্বব্যাপী যে ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেটাতে তারা (ভারত) যে মনোক্ষুণ্ন, বেদনার্ত তা ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কথায় তা প্রকাশ পেয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে ভদ্রতা ওশিষ্টাচার পরিপন্থী।’

আওয়ামী লীগ চুপচাপ নেই উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কিন্তু তাদের অবশিষ্টাংশ দেশে আছেন। যারা এখন চুপ করে আছে, ঘাপটি মেরে আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে চুপচাপ আছে। আসলে কিন্তু তারা চুপচাপ নেই। দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

দুর্গাপূজা সামনে রেখে নাশকতার চেষ্টা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামনের দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রচেষ্টা থাকবে। যদিও আমরা বিভিন্ন ধরণের আলামত দেখে মনে করছি তারা (আওয়ামী লীগ) নাশকতা করার চেষ্টা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করতে পারে।’

খুলনায় বিভিন্ন মন্দিরে খোলা চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এটা নি:সন্দেহে যে বড় ধরণের চক্রান্ত চলছে, তারই বহিপ্রকাশ। কিন্তু জনগণ এই বিষয়ে অত্যন্ত সর্তক আছে সচেতন আছে। বিএনপি ও তার অসহযোগী সংগঠন এবং গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের প্রত্যেকে এই ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।’

কোনো অনৈতিক কাজে বিএনপি জড়িত নয় বলে জানিয়েনে রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি শত নির্যাতন নিপীড়নের পরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও কিন্তু ভিডিও বার্তায় দলের নেতাকর্মীদের দখলবাজি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও যারা নির্দেশ মানেনি তাদের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এটাই হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য। আর এই জন্য দেশের মানুষ বিএনপিকে বেশি পছন্দ করে। অথচ বিগত ১৫ বছর দখলবাজি, টাকা পাচারের পরও তো দেখিনি শেখ হাসিনাকে এই বিষয়ে কথা বলতে। কারণ তিনি জানতেন, তাইতো প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন- ‘‘আমার পিয়নেই তো ৪শত কোটি টাকার মালিক”।’

ছাত্রজনতার আন্দোলনের প্রকাশ্য এবং নৈপথ্যে ছিলেন তারেক রহমান উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে এবং নৈপথ্যে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তাই গত ৭ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনে না যাওয়ার পিছনে অনড় ছিলেন। তার অনড় অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা ওই নির্বাচনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। যা ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই পথ ধরেই ছাত্রজনতার চূড়ান্ত আন্দোলন। অথচ এই দেশের অনেক সুশীল ব্যক্তি তখন বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব দ্রুত দেশে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রুহুল কবির রিজভী। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক উপস্থিত ছিলেন।