খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩ জন নিহতের ঘটনার পর এর উত্তাপ ছড়িয়েছে পাশের জেলা রাঙামাটিতেও। এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এই সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা দুইটা থেকে ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ জারি করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায় স্বাক্ষরিত আদেশে আজ রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে শুক্রবার সকাল থেকে রাঙামাটিতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনার পর পৌর এলাকায় বেলা একটা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যা রূপ নেয় সংঘর্ষে। সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামে একটি সংগঠন মিছিল নিয়ে বনরুপা এলাকায় যায়। এ সময় মিছিলে ঢিল ছোড়ার অভিযোগ করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা। হামলার খবর পেয়ে অপর পক্ষ তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার জানান, সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

রাঙামাটি পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামালউদ্দিন জানিয়েছেন, সকালে পাহাড়িদের একটি মিছিল বনরূপায় এসে ফিরে যাওয়ার সময় বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলাসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপরই বাঙালি ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের পাল্টা ধাওয়া দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে সকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি কাজ শুরু করেছে।

এদিকে আগুনে ফাইবার অপটিকের ক্যাবল পুড়ে যাওয়ায় শহরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইয়েস নেটের পরিচালক মো. শাহীন।

এর আগে, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষের জের ধরে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)। চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়িতে মোহাম্মদ মামুন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করার ঘটনার জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। আহত মামুন বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার বাসিন্দা।