অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা একমত হয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সব কিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সভার পর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সিদ্ধান্তগুলো জানাতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফ করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

সেখানে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের গতি এক থাকত না।

‘অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগে একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে।’

একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সভার আলোচনার বিষয় তুলে ধরে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বিদেশী অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশী সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না।
‘তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সাথে মিলে-এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।’

দাতা সংস্থাগুলো টাকা দিতে চাচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউএসএইড বলছে, তোমরা যে প্রকল্পই আনো, আমরা টাকা দিয়ে দেবো। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় যেসব সংস্থা আছে, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।‘

চলমান প্রকল্পের বিষয়ে তাদের কোনো অসুবিধা নাই। তারপরও বলছে, তোমাদের চাহিদা বল, আমরা চেষ্টা করব।’ কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কথা হচ্ছে ‘আস্তে’ চলা,-বিষয়টি তুলে ধরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন,‘আমাদের হাতে এখন একদমই প্রকল্প নেই। আমরা কিছু দিন আস্তে আস্তেই চলব। আমরা আরো চার-পাঁচ মাস পর বুঝতে পারব যে, আমাদের উন্নয়ন বাজেট কত হওয়া উচিত।’

দেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশী ঋণ বা সহায়তা আসবে না, সেগুলোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন,‘রাজস্ব আদায়ে সব বছরেই অনিশ্চয়তা থাকে, এই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেল। অর্থনীতির অনেক অস্থিরতা গেল, এখনো আছে।’

প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার এমনটি তুলে ধরে এই উপদেষ্টা বলেন,‘এখনকার উপদেষ্টা যারা আছেন, তারাই বলছেন আমরাই দায়বদ্ধ হতে চাই।’

যেসব প্রকল্পের অনুমোদন হলো
অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে দুটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এর মধ্যে‘বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ৭০.৬৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ‘দুটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং দুটি অনুসন্ধান ক‚প (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্পে’ ৫৮৮.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’ এর জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৯.৮৪ কোটি টাকা জিওবি এবং ১০০.১৬ কোটি টাকা ইউনিসেফের অনুদান।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য আপা : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়, দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করার নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রকল্পটিতে দুই বছরের জন্য ১৬৩.১১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ব্যয়ও কমানো হবে।