ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩২) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।গতকাল বুধবার মধ্যরাতে হলের গেস্টরুমে এ ঘটনা ঘটে। তবে হত্যার আগে তাকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন হলের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল (৩৫)। নাম ছাড়া প্রাথমিকভাবে তার অন্য পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানিয়েছেন হলের একাধিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গতকাল ফজলুল হক হলে টুর্নামেন্ট ছিল। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের ছয়টি ফোন চুরি হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে আটক করেন তারা। পরে তাকে হলের এক্সটেনশনের গেস্টরুমে নিয়ে কয়েক দফা মারধর করা হয়। এরপর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার দেওয়া হয়। খাবার খেতে না চাইলে তাকে আরেক দফা মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। তোফাজ্জলকে জোর করে প্রচুর পরিমাণে ডাল খাওয়ানো হয়। ডাল না খেলে শিক্ষার্থীরা তাকে মারতে থাকেন। খাওয়া শেষে তাকে হলের মেইন গেস্টরুমে আনা হয়। পরে সেখানে নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়।
মারধরের কারণে তোফাজ্জল দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছিলেন না। সেসময় তার পিঠ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তার রক্তে গেস্টরুমে ফ্লোর ভিজে যায়। ওই অবস্থায় তাকে নাচ করতে বলেন শিক্ষার্থীরা। তাকে প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মারধর করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা বলেন, আমাদের বিকেলের শিফটের সদস্যরা ৯টার কিছুক্ষণ আগে ওই হলে হাজির হয়। তখন কী হয়েছিল জানি না। আমরা রাতের শিফটের সদস্য। তোফাজ্জলকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে। আমাদের সঙ্গে তিনজন হাউজ টিউটর ও ছয়জন শিক্ষার্থী ছিলেন। থানায় গিয়ে হাউজ টিউটর স্যাররা ওসির সঙ্গে কথা বলেন। ওসি তখন তোফাজ্জলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান। এরপর হলের ছয়জন শিক্ষার্থী তাকে নিয়ে ঢামেকে যান।
এ বিষয়ে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ‘রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ফজলুল হক মুসলিম হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে আহত অবস্থায় মেডিকেলে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক লোকটিকে মৃত ঘোষণা করে। তখন শিক্ষার্থীদের খোঁজ করলেও আমরা কাউকে পাইনি। তাদের নাম আমাদের খাতায় এন্ট্রিও করেনি। শুধু পরিচয় দিয়েছিল তারা শিক্ষার্থী। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খুব ভোরে আমি ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। পরে ফজলুল হক মুসলিম হলে এসে দুটো গেস্টরুম সিলগালা করেছি। প্রভোস্টকে বলেছি– আজকের মধ্যে দায়ীদের শনাক্ত করে রিপোর্ট দিতে। রিপোর্টের আলোকে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। আমরা ইতোমধ্যে অ্যাকশন শুরু করে দিয়েছি। শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে।’