ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ মারধরের শিকার হয়ে নিহত হন তোফাজ্জল হোসেন (৩২) নামের এক ব্যক্তি।গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ঢাবির ওই হলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তোফাজ্জলকে নির্যাতনের সময় মুসলিম হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জালাল আহমেদের স্ট্যাম্প হাতে দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ ওঠে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জালাল জানান, তোফাজ্জলকে মারধরের সময় এক ছোটো ভাইয়ের হাত থেকে তিনি লাঠি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

জালাল আহমেদে ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে। তিনি ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। গত ১৬ জুলাই তিনি পদত্যাগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জালাল মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি তিনটি স্টেজে ঘটেছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমার জানা ছিল না। আমি হলের ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। এজন্য আমার নামেই বেশি ব্লেম আসছে। ঢাবি ক্যন্ডিডেটদের মধ্যে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে গত ১৬ জুলাই পদত্যাগ করেছিলাম। আমি পদত্যাগ অনেক আগেই করতাম, কিন্তু আমি পোলাপানদের ইনফরমেশন দিতাম যে সেন্ট্রাল ছাত্রলীগ কি পদক্ষেপ নিচ্ছে। সেসব স্ক্রিনশর্ট আছে আমার কাছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হলের ফুটবল খেলার টিমের আমি ওর্নার। গতকাল ফিজিক্স টিমের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা বাতিল হয়। এরপর আমি পুরাতন বিল্ডিংয়ের (দক্ষিণ ভবনে) যাই। ওখানে আমার তিনটি ছোট ভাই থাকে। সেখান থেকে আসার সময় হলের সৃষ্টি ডাইনিংয়ের সামনে দুই স্যার আমাকে বলেন, ‘‘হলে নাকি চোর পিটানো হয়েছে, চলো যায়’’। এরপর সেখানে গিয়ে দেখি ওই লোকের পায়ে পেটানোর কারণে ব্লিডিং হচ্ছে। সেখানের পরিবেশ অনেক খারাপ ছিল। এরপর বিষয়টি প্রক্টোরিয়াল টিমকে জানানো হয়।’

সাবেক ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রক্টোরিয়াল টিম ও স্যারেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হলের বাইরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন তোফাজ্জলকে তার বাড়ির নম্বর জিজ্ঞাসা করি। তিনি ৩-৪ মুখস্তভাবে ১২-১৪টি নম্বর বলেন। এরপর হলের এক ছোটো ভাই স্ট্যাম্প নিয়ে তাকে পেটাতে যায়। এরপর আমি তার হাত ধরে বসি। তখন তার হাত থেকে স্ট্যাম্প ছিনিয়ে নিই। ওই ছবি দেখে সবাই মনে করছে আমি সবচেয়ে বেশি পিটিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ আসছে এ কারণে আমি ছাত্রলীগ করতাম। তবে আপনারা খোঁজ নেন আমার বিষয়ে, সবার কাছে শুনে দেখেন আমি স্বেচ্ছায় ছাত্রলীগে আসছিলাম কিনা। আমি যদি দোষী হতাম তাহলে আমি এখানে ইন্টারভিউ দিতে অসতাম না। ’

এদিকে, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার পর আজ বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় জালাল আহমেদ এবং মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সুমন আটক করে পুলিশ। আটকের সময় হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এর আগে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় অভিযোগটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ৷ পরে এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে শাহবাগ থানা পুলিশ।