বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অবিস্মরণীয় বিজয়ের পর দেখা যায়, বহু সংখ্যক ব্যাংকার আহত , নিহত, জেল জুলুমের শিকার ও স্বজনহারা হয়েছেন। অর্থাৎ, ব্যাংকারগণ নিজে ও সন্তান সন্ততিসহ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা উচ্চ শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট, মাফিয়া ও লুটেরাদের মদতপুষ্ট বাদে সবাই দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত। দেশপ্রেমিক ব্যাংকারগণ ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ৫ আগষ্টে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। এখন দেশে আসীন হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী চেতনায় উদ্দীপ্ত নেতৃবৃন্দ। মাজলুম ব্যাংকারগণ তাদের বরাবর বিগত দিনের অন্যায় বৈষম্য লাঘবের আশায় বিনীত আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশের একমাত্র সেরা ব্যাংক, যা পূর্ব থেকে ফ্যাসিস্ট আমলেও কয়েক বছর পৃথিবীর সেরা হাজার ব্যাংকের তালিকায় ছিল; ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে বহু কর্মী লুটেরা এস আলম কর্তৃক মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি হোটেল রেডিসনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকটির কর্তৃক নেয়। কিন্তু ২০১৬ সালেই সে এ ব্যাংকে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ঐবছর ব্যাংকে কর্মরতদের থেকে এবং বাইরে থেকে নিয়োগ দিয়ে একটি মদতপুষ্ট গোষ্ঠী তৈরি করেছে এবং তাদের পদোন্নতি দিয়েছে ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে। এরপর দেশের লাখ লাখ যোগ্য ও মেধাবী ছাত্রজনতার প্রতি অন্যায় বৈষম্য করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তাদের প্রায় সবাইকে ২০১৬–২০২৪ সাল পর্যন্ত নয় বছরে কমপক্ষে তিন/চারটি বা আরো অধিক স্পেশাল পদোন্নতি দিয়ে প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করেছে; যাতে নির্বিঘ্নে লুটতরাজ ও টাকা পাচার করা যায়। অন্যদিকে অসংখ্য মেধাবী, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক ব্যাংকারদের প্রতি অন্যায় বৈষম্য করে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করেছে অথবা বড়জোর একটি পদোন্নতি দিয়েছে। এভাবে লুটেরা এস আলম ব্যাংকে অসংখ্য অন্যায়, অনাচার ও বৈষম্যের ঘটনা ঘটিয়েছে। ফলে ব্যাংকটি দেশের সেরা বা পৃথিবীর হাজার ব্যাংকের গৌরব হারিয়েছে।
বিজয়ের পর বৈষম্যের শিকার ব্যাংকারগণ আগত কর্তৃপক্ষের কাছে সার্বিক অবস্থা বিবেচনাপূর্বক বৈষম্য নিরসনে যুক্তিসঙ্গত দাবি জানিয়েছেন। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে (২০১৬-২৪ সালে) দুয়ের অধিক পদোন্নতিপ্রাপ্ত স্বার্থান্বেষী ও লুটেরাদের মদতপুষ্টরা হঠাৎ নিজেদের রূপ পাল্টে কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে জোরপূর্বক পদোন্নতি আদায় করেছে। এতে কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
বৈষম্যের শিকার ব্যাংকারদের পাঁচটি দাবি ছিল। কিন্তু, সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং ব্যাংকের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনায়, তারা শুধু পদোন্নতি বৈষম্য নিরসনে যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাবনা দেয়। তা এরকম- ২০১৬-২৪ সালে নয় বছরে সম্পুর্ণরূপে পদোন্নতি বঞ্চিতগণ একশভাগ এবং একটিমাত্র পদোন্নতি প্রাপ্তগণ নববইভাগ বৈষম্যের শিকার। এদের বৈষম্য লাঘবে প্রথমে একটি প্রমোশন এবং ডিপ্লোমা ও অন্যান্য বিবেচনায় অধিকতর যোগ্যদের আরেকটি সহ মোট দুটি প্রমোশন দেয়া হোক। যারা দুটি প্রমোশন পেয়েছেন, তাদেরও বৈষম্যের শিকার ধরে, ডিপ্লোমা ও অন্যান্য বিবেচনায় একটি প্রমোশন দেয়া হোক। যারা দুয়ের অধিক প্রমোশন পেয়েছেন, তাদের সর্বোচ্চ তিনটির বেশি পদ থেকে ডিমোশন দেয়া হোক। আর দেশের মেধাবী ছাত্রজনতার প্রতি বৈষম্য করে বিনা পরীক্ষায় অবৈধ নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই বা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
অতএব, ইসলামী ব্যাংকে বৈষম্য ও প্রমোশন বিড়ম্বনার বিষয়টি পরিষ্কার। যেহেতু এখন দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে এবং তারাও পালিয়েছে, তাই ইসলামী ব্যাংকে উল্লেখিত অন্যায়-বৈষম্য আর নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত, লুটেরাদের ভয়ে ভীত না হয়ে, ফ্যাসিস্টদের সকল বৈষম্য মুলোৎপাটন করা।
সিরাজী এম আর মোস্তাক