সেন্টমার্টিনে রেজিস্ট্রেশন করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
তিনি বলেন, প্রতিদিন এক হাজার ২০০ পর্যটক রেজিস্ট্রেশন করে সিডিউল মতো যাওয়ার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত সরকারের আমলে। কিন্তু এখন এটা এই সরকারের ওপর চাপানো হচ্ছে।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি ভ্যালি রেস্টুরেন্টের হলরুমে স্থানীয় ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড ও স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের প্রতিনিধির সাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড’ কর্তৃক আয়োজিত ‘পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মো: মাজহারুল ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন হচ্ছে একটা ইউনিয়ন পরিষদ। সেখানে ২৫০টা হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। এটা কি স্বভাবিক কথা ? এছাড়া এখানে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার অফিস রয়েছে। সাথে রয়েছে তাদের থাকার রিসোর্ট। পরিবেশ অধিদফতরের মতো একটা প্রতিষ্টানেরও রয়েছে তিনটা বিল্ডিং। কোনো কোনো সময়ে সেখানে ১০-১৫ হাজার পর্যটক অবস্থান করেন। সেখানের স্থায়ী বাসিন্ধাসহ এতো পর্যটক একসাথে চলে গেলে নেটওয়ার্কিং একটা সমস্যা তৈরি হওয়া স্বভাবিক। কারণ, এত বেশি মানুষ একসাথে গেলে সেখানের পরিবেশ আর স্বাভাবিক থাকার উপায় নেই।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোড চালু হলেও ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত এটির কোনো কার্যক্রম’ই ছিল না। শ্রীমঙ্গলে একটা ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার চালু করা হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা এর আগেও বলেছি এখন আবার বলছি শ্রীমঙ্গলকে প্রায়োরিটির ভিত্তিতে ট্যুরিজমের জন্য ডেভলপম্যান্টের কাজ করা হবে। আমরা শ্রীমঙ্গলে আরেকটা কাজ করতে চাই। সেটা হচ্ছে ‘আই লাভ শ্রীমঙ্গল’ লিখে একটা সেলফি জোন আমরা করব। এজন্য আপনারা একটা জায়গা আমাদেরকে নির্ধারণ করে দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলাপ করে আমাদেরকে চিঠি দিলে তিন মাসের মধ্যেই করে দিতে পারব। চিঠি পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করে দিব আপনাদেরকে কথা দিলাম।
তিনি বলেন, দেশের বাহিরে অনেক রাষ্ট্রদূতের সাথে আমাদের কথা হয়। বিদেশীরা যখন বাংলাদেশ দূতাবাসে ভিসার আনতে যান তখন একজন বলেন বাংলাদেশে গিয়ে কি করবেন, সেখানে দেখার মতো কি আছে? আবার আরেকজন বলেন, আপনারা আমাকে ব্রশিউর তৈরি করে দেন। যাতে একজন ভিসা করার পর যাতে উনার পাসপোর্টের সাথে দিতে পারি। বিষয়টা হচ্ছে একেকজনের চিন্তা একেক রকম। এজন্য মানসিকতার আগে পরিবর্তন করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আগে নিজে থেকে পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার ঢাকা বিমানবন্দরে একটা নির্দেশনা দিয়েছেন দুই-তিন দিনের মধ্যেই আপনারা সেটা দেখতে পারবেন। সেখানে অনেক কিছুই পরিবর্তন আসবে।
বিদেশীদের বাংলাদেশে ভ্রমণে যে রেড অ্যালার্ট দেয়া হয়েছে সেগুলো কোন দেশ কি অ্যালার্ট দিয়েছে সেগুলো আমরা বের করে নোট করেছি। আগামি সোমবারেই আমরা প্রধান উপদেষ্টার নজরে নিয়ে আসব। আশা করি সেগুলো তিনি সেসব দেশের অ্যাম্বাসেডরকে বলে দিলে তারা এটার ব্যাপারে ব্যবস্থা করবে। উনার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে সারা বিশ্বব্যাপী। তখন বিদেশী পর্যটক আসতে আরা বাধা থাকবে না।
তিনি দাবি করে বলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ট্যুর অপারেটরদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে আইন করা হয়েছে সেগুলো আমরা করিনি। আমরা শুধু একটা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রস্তাব পাঠাই আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে। তারা আপনাদের মতো বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলে ১০ বা ১৩ লাখ টাকার স্ট্যাটমেন্ট এবং তিন লাখ টাকার ডিপোজিট রেখে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রস্তাব করে। সেটা কিন্তু আমরা করিনি। বিষয়টিতে যেহেতু আপনাদের মতো তৃণমূল পর্যায়ে ট্যুর অপারেটদের আপত্তি রয়েছে তাই বিষয়টি আপনারা সরকারকে জানাতে পারেন।
কমিউনিটি বেজ ট্যুরিজমের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা কাজ শুরু করতে পারেন, আমরা সহযোগিতা করব। কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলা, পটুয়াখালি এবং মৌলভীবাজার জেলাকে ট্যুরিজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টার করব এসব জেলাকে পর্যটক জেলা ঘোষণা করা যায় কি না।
বিদেশী টুরিস্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, আফ্রিকার ট্যুরিস্ট বাংলাদেশে বেড়াতে আসবে না, যারা আসে তারা স্মাগলিং করার জন্য আসতে চাইবে। আমরা চাই ইউরোপ, আমেরিকার ট্যুরিস্ট। আমরা চাই ভারত এবং চায়নার ট্যুরিস্ট। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ বসবাস করে ভারত এবং চায়নায়। তারা যদি বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন তাহলে আমাদের ট্যুরিজম ব্যবসা জমজমাট হবে। তবে আমাদের দেশ থেকে কোনো ঘটনা ঘটলে সেটাকে নেগেটিভলি লাইভ টেলিকাস্ট বেশি হওয়ায় রেড অ্যালার্ট জারি করার পর ওই দেশের পর্যটকরা তাদের ভ্রমণ বাতিল করেন। এজন্য বিদেশি পর্যটকের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রজেটিভলি প্রচারণা করতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে আমাদের এখন ভরসার জায়গা হচ্ছেন ড. ইউনুস। উনি যদি বিদেশীদের বলেন, আপনারা বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন, তাহলে আমাদের বিশ্বাস বিদেশীরা আসবেন। আমরা সেই আশায় আছি।
এর আগে মৌলভীবাজার টোয়ামের আহ্বায়ক মো: খালেদ হোসেনের সঞ্চালনায় ‘পর্যটন শিল্পকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ বিষয়ে পর্যটন শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, স্মার্ট ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী ও দৈনিক নয়া দিগন্তের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এম এ রকিব, বৈশাখী ট্যুরের সিইও মো: শফিকুল ইসলাম রুম্মন, রাহা ট্যুরিজমের ট্যুর অপারেটর লুৎফুর রহমান, অতিক্রম ট্যুরিজমের সাইফুল ইসলাম, গ্রিন লিফ ইকোট্যুরিজমের ট্যুর অপারেটর তাপস দাশ, ট্যুর গাইড লিটন দেব, ওয়ান ওয়ার্ল্ডের পরিচালক মোতাহের আলম, ট্যুর গাইড জামাল হোসেন, সাজু মারচিয়াং, শ্যামল দেব বর্মা, গ্রিন লিফ গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী এস কে দাশ সুমন প্রমুখ।