গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাট মন্দির ভাংচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে অন্ততঃ ১০/১২ জন আহত হয়। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে এক যুবককে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এঘটনার প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় এক ঘন্টা অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। শুক্রবার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে এ ঘটনা ঘটে।

আটককৃতের নাম- মুরাদ হোসেন (৩০)। সে নাটোরের লালপুর থানার আব্দুল্লাহপুর এলাকার ফরিদ হোসেনের ছেলে।

হিন্দু সম্প্রদায় ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর ধরে কালিয়াকৈরে সফিপুরের রঙ্গারটেক এলাকায় সফিপুর সার্বজনীন শ্মশানঘাট ও রাধাগোবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দির রয়েছে। ওই মন্দিরে এলাকার হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। কিন্ত স্থানীয় লেবু মিয়া ওরফে লেবু কন্ট্রাক্টর ওই বিতর্কিত জমি ক্রয় সূত্রে মালিক দাবী করে তা দখল করার চেষ্টা করে। কিন্তু মন্দির থাকায় জমি দখলে যেতে পারেনি লেবু মিয়া। শুক্রবার সকালে লেবু মিয়া অর্ধশতাধিক লোক নিয়ে মন্দিরের ৪ শতাংশ জমি দখল করতে যায়। এসময়ে তারা হামলা চালিয়ে নাটমন্দিরের টিনশেড ঘর ভাংচুর করে। খবর পেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেরিয়ে এসে তাদের বাঁধা দিলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপরও হামলা চালায়। এতে ১০/১২ জন আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এসময়ে মুরাদ হোসেন নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে এলাকাবাসী। এদিকে নাট মন্দির ভাঙ্গার প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই শতাধিক নারী ও পুরুষ জড়ো হয়ে স্থানীয় সফিপুর বাজার এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। মহাসড়ক অবরোধের ফলে যানবাহন আটকা পড়ে সড়কের উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

সফিপুর সার্বজনীন শ্মশানঘাট ও রাধাগোবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দিরের আহ্বায়ক কৌশিক অধিকারী ও যুগ্ম আহ্বায়ক হরিপদ সরকার বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এখানে মন্দির রয়েছে। সম্প্রতি একটি মহল ওই ভুয়া ও জাল দলিল তৈরি করে ওই মন্দিরের জমি দখল করার পাঁয়তারা করে আসছে। শুক্রবার সকালে লেবু মিয়া তার ভাড়াটে ৫০-৬০জন সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়ে মন্দিরটি ভাংচুর করে জমিটি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে। এসময়ে বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে ১০/১২জনকে আহত করে। ঘটনার সময়ে মুরাদ হোসেন নামের হামলাকারী এক সন্ত্রাসীকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এরআগেও তারা দখল করতে একাধিকবার হামলা চালায়। কিন্তু প্রতিবারই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ স্থানীয়দের বাঁধার প্রেক্ষিতে তারা ফিরে যায়।

এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ ও কালিয়াকৈর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, মন্দির ভাঙ্গার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সময় স্থানীয়রা মুরাদ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে পিটুনি দেয়। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।