গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্বামীকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ সহ ও এক সাবেক আইজিপি এবং আওয়ামী লীগের ১৫৫জনের নাম উল্লেখ করে বাসন থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরোও ১৫০-২০০ জন আসামি করা হয়েছে। নিহত নজরুল ইসলামের (৩২) স্ত্রী মোছাঃ পূর্নিমা বেগম বাদি হয়ে বুধবার মহানগরীর বাসন থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। ওই থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মেহের আফরোজ চুমকি, সিমিন হোসেন রিমি, রুমানা আলী টুসি, সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল, সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি, আসাদুর রহমান কিরণ, আফজাল হোসেন সরকার রিপন, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, গাজীপুর মহানহগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শাহাবুদ্দিন মন্ডলের বাসায় ভাড়া থাকতেন নজরুল ইসলাম (৩২)। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার বারইভাগ এলাকার মোঃ জামাল শেখের ছেলে।
এজহার সূত্রে আরো জানাগেছে, গত ২০ জুলাই বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম ঢাকা-ময়মনসিংহ গামী মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাসন থানাধীন চান্দনা এলাকায় পশমী সোয়েটার গার্মেন্টসের পাঁকা রাস্তার উপর এসে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে মামলার প্রথম ১৬জন আসামির নির্দেশে অন্য আসামীরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। এসময় তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাথারীভাবে গুলি ছুড়িতে থাকে। এতে পিঠের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান নজরুল ইসলাম।
পরে নিহতের লাশ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন বারইবাগ গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়। স্বামীর মৃত্যুতে আমার পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হওয়ায় এবং বর্তমানে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকায় উক্ত আসামীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয় বলে এজহারে উল্লেখ করেন বাদী।
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীসহ ৫৭ জনের নামে হত্যা মামলা
এদিকে গাজীপুরে অটোরিকশা চালক হৃদয়কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে মহানগরীর কোনাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের ফুফাত ভাই টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার আলমনগর এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মো. ইব্রাহিম বাদি হয়ে সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হককে প্রধান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খান, সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, কোনাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, গাসিক কাউন্সিলর সেলিম রহমান, আব্বাস উদ্দিন খোকন, কাউসার আহমেদ, শফিকুল আমিন তপন ও সঞ্জিত সরকারকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরো ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোনাবাড়ি থানার ওসি শাহ আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এজাহার বাদি উল্লেখ করেন, নিহত হৃদয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী থানার হরিনাচালা এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে হৃদয় ও বাদি মো. ইব্রাহীম অটোরিকশা চালাতেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে তারা কোনাবাড়ী থানার কুদ্দুছ নগর এঞ্জেল গেইট এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা কোনাবাড়ী থেকে কাশিমপুর সড়ক দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কোনাবাড়ী থানার দিকে আসতে থাকে। সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে অন্য আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রাম দা, রড, চাপাতি, লাঠি সোটা নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর আক্রমন করে। এতে হৃদয় নিহত হয়।