গাজীপুরের কালীগঞ্জে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, উপজেলা পরিষদের সাবেক দুই চেয়ারম্যান, পৌরসভার সাবেক মেয়র, জেলা পরিষদের সদস্য ও চার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১১৪ নেতা-কর্মীকে আসামী করে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। হত্যা, মারধর ও চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই তিনটি মামলা বুধবার দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক আমজাদ হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মাজেদুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সদস্য সফিকুল কাদের, বাহাদুরসাদী ইউপির চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জামালপুর ইউপির চেয়ারম্যান খাইরুল আলম, নাগরী ইউপির চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ মোড়ল, পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আহমেদুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, তুমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, কাউন্সিলর আমির হোসেন খাঁ, আশরাফুল আলম, বাদল হোসেনসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে উপজেলার বালিগাঁও বাইপাস সড়কে মিছিল করার সময় মেহের আফরোজ চুমকির হুকুমে আসামিরা ইসমাইল হোসেনকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। ইসমাইল উপজেলার উত্তরগাঁও এলাকার বাসিন্দা। ওই ঘটনায় ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৬৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩৫ থেকে ৪০ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে হুকুম প্রদান, মারধর, গুরুতর জখম ও হুমকির অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
একইদিন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান শেখ বাদী হয়ে মেহের আফরোজ চুমকিসহ আওয়ামীলীগের ৪০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট, গুরুতর জখম করে লাশ গুমের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১১ সালের ৬ মে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যুবদলের সম্মেলনে যাওয়ার সময় মেহের আফরোজ চুমকির নির্দেশে তাঁদের মারধর করেন আসামিরা। ওইদিন বিকল্প পথে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে ট্রলারে সম্মেলনে যাওয়ার চেষ্টা করলে দুপুর দুইটার দিকে কালীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের ট্রলারের গতিরোধ করে হামলা করে। হামলায় ট্রলারে থাকা বিএনপির দুই কর্মী জমির ও নাঈম নদীতে পড়ে নিখোঁজ এবং প্রায় ৪০ নেতা-কর্মী রক্তাক্ত জখম হয়। পরদিন ৭ মে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের দক্ষিণ পাশ থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। ওই সময় আসামিদের বাধার কারণে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।
অপরদিকে, উপজেলার বাদিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শরিফ মিয়া বাদী হয়ে কাউন্সিলর যুবলীগ সভাপতি বাদল হোসেন ও তাঁর ভাই এনামুল হক, আলম ভূঁইয়াসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে গুরুতর জখম ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।