ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেবে দলটি। এছাড়া দুবাইয়ে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতেও চিঠি দেবে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব চিঠি দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই আন্দোলনে বিজয়ের আগে সরকার তার সরকারি বাহিনী দিয়ে যে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, সে ব্যাপারে সব সময় আমরা কথা বলে এসেছি। এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে চিঠি দেব। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও চিঠি দেব। এছাড়া আন্দোলনে সমর্থন জানানোয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ৫০ প্রবাসীকে মুক্তির জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চিঠি দেব।
শুরুতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শুরু করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। এতে পুরো জাতির কাছে আশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। নতুন একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এটা মনে করি গণতন্ত্রের জন্য সুখবর। যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বিচার বিভাগে সেটা অনেকাংশে মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি যে, দেশে ও বিদেশে গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন করা হচ্ছে। সেখানে বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এসব বিষয়গুলো তুলে ধরছে, যা একেবারেই সঠিক নয়। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে যা সম্প্রদায়গতভাবে নয়, রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে। এটার সঙ্গে আমাদের (বিএনপি) জড়িয়ে একটা খবর পরিবেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি তো জড়িত নয়ই, বাংলাদেশের সুস্থ স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে না। এটা একটা চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের অর্জিত নতুন করে যে স্বাধীনতা সেটাকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল ও সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন।