গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুরে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে শনিবার সকালে সিঙ্গাপুর থেকে ইউএস বাংলার একটি বিমানে করে দেশে ফিরেছেন। সকাল ৮টার দিকে তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে নামেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে কাকভেজা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিমান বন্দর ও তার বাসাসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের ঢল নামে। তিনি বিমান বন্দর থেকে সরাসরি গাজীপুরের চান্দরা এলাকার নিহত যুবলীগ নেতা হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লার বাড়ি যান এবং কবর জিয়ারত করেন। পরে তিনি ছয়দানা হারিকেন এলাকার নিজ বাসায় ফিরেন। বাসায় ফিরে তিনি বৃদ্ধ মা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে তার মা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চলমান সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি করে সমবেত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের শান্ত থাকার আহবান জানান।

জাহাঙ্গীর আলমের দেশে আসার সংবাদ পেয়ে শনিবার ভোর থেকে তার কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিমান বন্দর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বিমান বন্দরে এসে পৌঁছলে জাহাঙ্গীর আলমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিমউদ্দিন বুদ্দিন। পরে বিমান থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মোটরসাইকেল ও গাড়ির বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি গাজীপুরের ছয়দানাস্থ বাসভবনে আসেন। পথে তিনি দুর্বৃত্ত হামলায় মহানগরের চান্দরা এলাকার নিহত হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লার বাড়িতে যান। সেখানে তিনি জুয়েল মোল্লার কবর জিয়ারত করেন। এসময় তিনি জুয়েল মোল্লার বাবাসহ স্বজনদের সাথে কথা বলেন, খোজখবর নেন এবং সমবেদনা জানান। বিমান বন্দর থেকে বাসায় ফেরার পথে আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী, বোর্ডবাজারসহ তার বাসভবন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে শুভেচ্ছা জানান। জাহাঙ্গীর আলম বাসায় ফিরে মা মেয়র জায়েদা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় ছেলেকে কাছে পেয়ে উভয়ে জড়িয়ে আবেগআপ্লুত ও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। ছেলের সুস্থতার জন্য মা জায়েদা খাতুন আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জাহাঙ্গীর আলম তার বাসভবনে পৌঁছালে সেখানে অপেক্ষমান বীর মুক্তিযোদ্ধা, আলেম ওলামা, নেতা-কর্মী ও সাধারণ শতশত মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। জাহাঙ্গীর আলমকে স্বাগত জানাতে হারিকেনের বাড়িতেও আগে থেকেই কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলো। এখানে জাহাঙ্গীর আলম সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। এসময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে উত্তরায় আমার উপর হামলা করা হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে এবং সকলের দোয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমি বেঁচে ফিরেছি। আমি মায়ের কোলে ফিরে এসেছি। তিনি আহত হওয়ার পর এবং তার মা মেয়র জায়েদা খাতুনের বাসভবনে হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ এবং গাজীপুরবাসী সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়েছেন। এ জন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এসময় তিনি বলেন, আমি না হয় রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত, তাই আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্ত আমার মা একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ মানুষ। দুর্বৃত্তরা কয়েক ঘন্টাব্যাপি তাঁর রুমসহ বাড়ির সব কিছু তছনছ করা হলো, আগুন দিয়েছে। তাকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশের উদ্ধার করতে হলো কেন ? এ নারী কার কি ক্ষতি করেছে? কারা আমাকে, আমার মাকে হত্যা করতে চেয়েছে, জুয়েলকে হত্যা করেছে? তদন্তের মাধ্যমে যেন এর সঠিক বিচার হয়। দেশ তথা গাজীপুরের মানুষ দেখুক কারা অপরাধী? কারা মুখোশ পড়ে মানুষের সম্পদ, মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে চেয়েছিল? মেয়রের সন্তান হিসেবে আমি এর বিচার চাই।

নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, জুয়েলের বাবার চোখের পানি, আর্তনাদ-এমন আর কারো আর্তনাদ দেখতে চাই না। অনেক রক্তপাত, আনেক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। আর যেন না হয়। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। এর জন্য তিনি সরকারের উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

প্রসঙ্গতঃ, গত ১৯ জুলাই বিকেলে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গীদের নিয়ে ঢাকার সমাবেশে যাওয়ার পথে উত্তরায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। দুর্বৃত্তদের হামলায় জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গী যুবলীগ নেতা হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লা নিহত এবং জাহাঙ্গীর আলম ও তিনজন কাউন্সিলরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এসময় তাদের বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহতাবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম একটি বাসায় আশ্রয় নেন। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার হাসপাতালে পাঠায় এবং পরদিন ২০ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নেন। এদিকে ২০ জুলাই রাতে একদল দুর্বৃত্ত জাহাঙ্গীর আলম তথা মেয়র জায়েদা খাতুনের মহানগরের ছয়দানা হারিকেন এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং আগুন দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে নিরাপদস্থানে নেয়।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী ॥