কোটা সংস্কারকে আদালতের বিচারাধীন বিষয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের আগে সরকার এটির পরিবর্ধন-পরিমার্জনের বিষয়ে কিছু করবে না। আজ শনিবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অনেক দাবি ও বক্তব্য সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী। সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির আওতায় প্রণীত কোনো সরকারি নীতি শিক্ষার্থীদের একটা অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন হতে পারে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সংবিধানের আলোকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা–সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। অথচ গত কয়েক বছরে কোটা না থাকায় সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমে গেছে। পুলিশে মাত্র চারজন নারী কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। পররাষ্ট্র ক্যাডারে পেয়েছেন দুজন। ৫০টি জেলার নারীরা ক্যাডার পাননি। ২৩ জেলা থেকে কেউ পুলিশ ক্যাডার পায়নি।

তিনি বলেন, বিগত ৩৩, ৩৫ ও ৩৬তম বিসিএসে ৭২ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হয়েছে। এসব বিসিএসে কোটা থেকে নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় কম। ভারতে কোটা ৬০ শতাংশ, পাকিস্তানে সাড়ে ৯২ শতাংশ, নেপালে ৪৫ ও শ্রীলঙ্কায় ৫০ শতাংশ। দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় কোটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে একটি কুচক্রী মহল রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ এই শক্তি ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে ভর করেছিল। সড়ক নিয়ে যে আন্দোলন তাতেও ভর করেছিল। দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারুণ্যের শক্তির ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই।’

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক এবং শিক্ষার্থীরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়, আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আপিল বিভাগের রায়ের আগে সরকার কোটা পরিবর্ধন-পরিমার্জন নিয়ে কিছু করবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ।