সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ বুধবার এ স্থিতাবস্থা জারি করেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে দেশজুড়ে চলমান ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে রাজধানীজুড়ে ব্যাপক যানজট এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘রাস্তায় আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় না।’

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে তাদের মনেও ক্ষোভ আছে। তবে তারা যেটা করছে সেটা অ্যাপ্রিসিয়েট করার মতো না। রাস্তায় আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় না। আমরাও তো মানুষ, বিভিন্ন দিকে কথা বার্তা হচ্ছে, কিন্তু বিষয়টা সলভ করতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে নয়। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে আইন ও আদালতের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে আছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ যেন উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক আছে।’

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা (আওয়ামী লীগ) তো কোটামুক্ত সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। এখন আমাদের অবস্থান আদালতের ওপর নির্ভরশীল। আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। আশা করি, আদালত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আদালত চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে এ বিষয়ের নিষ্পত্তি করবেন। আদালত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন। শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ বিবেচনা করে আদালত বাস্তবসম্মত রায় প্রকাশ করবেন বলে আশা করি। পুরো রায় না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে বলছি। মানুষের দুর্ভোগ যাতে না হয়, সেদিকে শিক্ষার্থীদের খেয়াল রাখতে হবে।’

চলমান আন্দোলনের বিষয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠানো গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, এখনও বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন রুটে জরুরী কাজে যানবাহনে যাওয়া যাত্রীরা। তাদের গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটেগন্তব্যে যেতে দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর শাহবাগ সহ চানখারপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওঠার রাস্তা, মৎস্য ভবন মোড়, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলা মোটর মোড়, ফার্মগেট সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শুধু সড়ক নয়, রেলও অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে রেলে ভ্রমণ করা যাত্রিরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ব্যক্তিগত গাড়ি করে বাসায় ফিরছিলেন আল্পনা আক্তার নামে এক নারী। তিনি বলেন, ‘জরুরী কাজে বাইরে আসতে হয়েছে। কিন্তু জ্যাম ধানমন্ডি পর্যন্ত ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের খুব ভোগান্তি হচ্ছে। বেলা ১১টা থেকে রাস্তায় বসে আছি, এখন ২টা বাজে।’

দিশারী বাসের এক চালক বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে সায়েন্সল্যাব আসতে দেখি রাস্তা বন্ধ। এখানে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কখন ছাড়বে জানি না।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে কোর্ট নয়, নির্বাহী বিভাগের কাছে সিদ্ধান্ত চান তারা।

হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারির পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ‘বৈষম্যবিরোধী’ ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) অপেক্ষা করুন। আমরা বিস্তারিত জানাব। আদালতে কী হয়েছে এখনও বিস্তারিত জানি না। তবে এতটুকু বলতে চাই, কোটা সংস্কারের বিষয়ে কোর্টের কাছে নয়, নির্বাহী বিভাগের কাছে সিদ্ধান্ত চাই।’

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারিতে আশাহত হয়েছেন জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এ রায়ে আমরা আশাহত হয়েছি। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে চার সপ্তাহের রায় দিত না। এটা সারাদেশে চলমান আন্দোলনকে দমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মেকানিজমের অংশ। কিন্তু আমরা দেখছি তারা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করছেন। বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানোর মতো করে এ দেওয়া রায় হয়েছে।’