জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেন, বর্তমানে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশের বর্তমান অবস্থা ভালো নয়। আওয়ামীলীগের লোকজন ছাড়া বাংলাদেশের সকলেই এ কথার সাথে একমত হবেন। সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছে। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, মানুষের আয় সেভাবে কমছে। মুদ্রার নি¤œগামী, ডলারের সঙ্গে আমাদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। ডলারের সংকটের কারণে আমরা বিভিন্নভাবে আমদানী কমিয়ে আনছি। সরকার আমদানী কমিয়ে আনছে। কেননা আমাদের রপ্তানী এবং প্রবাসী আয় কমছে। যেহেতু আমাদের আমদানী ব্যায় বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রিজার্ভ কমতে কমতে এমন একটা অবস্থায় চলে আসছে যে সারা বিশ^ বলছে এদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করা যাবে না। যেহেতু এরা কোনো ডলার আমাকে দিতে পারে না। আমেরকিানরা বলছে তারা এখানে ব্যবসা করছে, তাদের টাকা পয়সা দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। তাহলে আমরা ব্যবসা করব কেন? আমি এখানে প্রফিট না করতে পারলে বিনিয়োগ করব কেন?
শনিবার গাজীপুর মহানগরের তেলিপাড়া এলাকায় সাগর-সৈকত কনভেনশন সেন্টারে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ওইসব কথা বলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর পায়রা উড়িয়ে তিনি সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের অর্থনীতিকে ফুটা করে ফেলেছেন, সেই ফুটা দিয়ে সবকিছু বেড়িয়ে চলে যাচ্ছে। আপনার রিজার্ভ কোনো সময় বাড়বে না। যেটা বাড়ছে সেটা দেড় থেকে দুই মাস পর আবার আগের অবস্থায় চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক যে দুরবস্থা তার কারণ বর্তমান সরকারের ভ্রান্তনীতি এবং দুর্ণীতি। গ্যাস এবং বিদ্যুতের বেহাল অবস্থা। সম্পূর্ণ দায়িত্ব হলো সরকারের। সরকারের দুর্ণীতির কারণে আজ এ অবস্থা। লক্ষ্য লক্ষ্য, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ খাতের দুর্ণীতির মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে আইন করেছিল দায় মুক্তির আইন। তারা বিদেশে গিয়ে বিলেনিয়ার (বড়লোকদের) তালিকায় নাম দিয়েছে। এটা কি বাংলাদেশের গৌরবের বিষয়? আগে আমরা শুনতাম আওয়ামীলীগ দায়মুক্তি চায় না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের জন্য ইনডেমনিটি দিয়েছে। এখন দায়মুক্তিতে আওয়ামীলীগ চ্যাম্পিয়ন। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানিখাতে দায়মুক্তি। যার কারণে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা পাচার এবং দেশে আজকে লুজার। যার কারণে আমাদের গাড়ী চলতে পারে না, চুলা জ¦লে না, ইলেক্ট্রিসিটি থাকে না দায়মুক্তির কারণে। আবার নতুনভাবে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে। অবসর ব্যংকিং করা হচ্ছে। যারা টাকা পয়সা বিদেশে পাচার করেছেন। সব টাকা পয়সা যদি ব্যাংকে আনেন কোনো কথা জিজ্ঞাসা করা হবে না। আপনি চুরি করেছেন, ডাকাতি করেছেন, না মানুষ খুন করেছেন কোনো দরকার নাই। টাকা আমার, এখানে নিয়ে আসেন। এটা দিয়ে কি রিজার্ভ হবে? যে টাকা এখন আসবে সে টাকা কালকে আবার চলে যাবে। সেটা কিভাবে রিজার্ভ হবে? সরকার সহযোগীতা করছে এ টাকা দায়মুক্তি দিয়ে সাদা করে দিব। কেউ কোনো জিজ্ঞাসা করবে না। চুরি, অপরাধ ও ডাকাতির দায়মুক্তি। এ দায়মুক্তি দিয়ে দেশকে তারা আজকে নর্দমায় ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারে না।
তিনি বলেন, দেশে থেকে লোন করে দেশের ব্যংকগুলো খালি করে দিয়েছেন। আর নিজস্ব লোককে লুটতরাজ করতে দিয়ে সেই ব্যাংক খেলাপি ঋন খালি হয়ে গেছে। এখন ব্যবসায়ীরা গেলে তারা কোনো টাকা পায় না। যার জন্য ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কলকারখানা লোক ছাঁটাই করতে হচ্ছে। তারা চালাতে পারছে না। আর বলা হচ্ছে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প করছি। দুর্ণীতির বটবৃক্ষ এই সরকার লালন করছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগকে কোনো সময় কোনো ব্যাপারে অনুসরণ করবেন না। আওয়ামীলীগ অনুসরণযোগ্য কোনো রাজনৈতিক দল না। শোষনের জন্য, অত্যাচারের জন্য তারা অনুসরণযোগ্য হতে পারে। মানুষের ও জনগণের কল্যাণের জন্য আওয়ামীলীগ অনুসরণযোগ্য দল নয়। আওয়ামীলীগের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার জন্য যাবেন না। তাহলে জনগণ আপনাকে ঘৃনা করবে। রাজনীতি করলে কষ্ট করতে হয়। কষ্টের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তাহলে জনগণ আপনার পাশে দাঁড়াবে। আপনি পারলেন কি পারলেন না সেটা বড় কথা নয়। মানুষ দেখতে চায় আপনার ইচ্ছা আছে কি না। আপনি আমার কথা বলতে চান কি না। আপনি আমার জন্য বষ্ট সহ্য করকে রাজি আছেন কিনা। আপিন আমার জন্য জীবন দিতে রাজি আছেন কিনা। যে কোন সময় যে কোন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। একজন সরকারি কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় বেনজির কি করে ৬০০ বিঘার উপরে গোপালগঞ্জে রিসোর্ট করেন? কি করে পঞ্চগড়ে ৫০ বিঘা জায়গার মালিক হন। কি করে নিলফামারী সদরে ৫০ বিঘার মালিক হন। কিভাবে তিনি বান্দরবনে আড়াই’শ বিঘা জমি মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করেন। শরীয়তপুরে আড়াই’শ বিঘা জমি স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করেন। গাজীপুর ভাওয়াল রিসোর্টে তিনি নাকি পার্টনার। সরকারি কর্মচারীরা যদি আওয়ামীলীগ আমলে শত শত কোটি টাকা বানাতে পারে তাহলে মন্ত্রী এমপি’রা কি করছে বুঝতেই পারেন। লুটপাট করে শেষ করে ফেলছে দেশটাকে। দুর্ণীতি করে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা শুণ্যের কোটায়। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগ ৪০টির বেশি সীট পাবে না। বর্তমান সরকার গরীবদের প্রতি কোনো রকম সহানুভূতি নাই। তাদের সহানুভূতি কিছু আমলা, ব্যবসায়ী। লুটপাট করে যাদের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে এদের সাথে তাদের আতœীয়তা। এদশের মানুষ আওয়ামীলীগ বিএনপির বাইরে একটি দলকে চাচ্ছে। আওয়ামীলীগের বাইরে বিএনপি। কিন্তু তাদের সেনাপতি নাই। তৃতীয় একজন নেতা হলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, জহিরুল ইসলাম জহির, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামসহ দলের জেলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীবৃন্দ।