বাংলাদেশের জনগণ নিজ দেশেই পরবাসী হতে চলেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে ভেতর দিয়ে ভারতের রেলপথ বসানোর চুক্তি করে এ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ এবং নির্যাতিত মা-বোনদের সাথে বেঈমানী করছে।

শুক্রবার (২৮ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল ডাকা সমাবেশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় ঢাকাবাসীসহ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরকে যথাসময়ে সমাবেশে আসার আহ্বান জানান রিজভী।

রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘যারা ভারত বিরোধিতার ইস্যু খুঁজছেন, তারা আবারো ভুল পথে যাচ্ছে’। ওবায়দুল কাদেরের কথায় ধরে নিতে হবে আমাদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে কেউ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থাপনা করে যাবে তারপরেও এর বিরোধিতা করলে সেটি ভুল পথ হবে, এ ধরনের কথা কেবলমাত্র নতজানু, জনগণের ক্ষমতা ছিনতাইকারী দেশদ্রোহীদের মুখেই সাজে। জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে চিকেন নেককে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত রেলপথ নির্মাণ করবে আর সেটি চুপ করে দেখা হবে একাত্তরের শহীদদের রক্তকে অসম্মান করার শামিল। বাংলাদেশে ভেতর দিয়ে ভারতের রেলপথ বসানোর চুক্তি করে এ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের সাথে এবং নির্যাতিত মা-বোনদের সাথে বেঈমানী করছে।”

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত রক্তে ভেজা, ভারত থেকে বয়ে আসা বাংলাদেশের নদীগুলো উষর মরুভূমিতে পরিণত হওয়া, চরম বাণিজ্য ঘাটতির পটভূমিতে বাংলাদেশের বুক চিরে রেললাইন বসিয়ে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের সুযোগে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যে শনিরদশা ডেকে আনা হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজস্ব শক্তির উপর নির্ভরশীল থাকতে পারবে না। এমনিতেই আমাদের দেশের জনগণের এনআইডির সকল তথ্য ভারতকে জানানো হয়েছে। ভারত সবসময় বিগব্রাদারসুলভ গরিমা থেকে বাংলাদেশকে বিবেচনা করে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘৭ জানুয়ারি একতরফা ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছে ভারত, তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে ভারতকে সব উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। জনগণ মনে করে দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতেই- ছাগলকাণ্ড, বেনজিরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড, হেলিকপ্টারে আসামি গ্রেফতারকাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে। একজন ডিক্টেটরের হুকুমে দেশ চলছে বলেই জনগণ আজ ত্যাজ্য, প্রত্যাখ্যাত ও নিজ দেশে পরবাসী হতে চলেছে।

তিনি বলেন, ‘দেশে দুর্নীতির মহামারী, লুণ্ঠন আর কুৎসিত অনাচারের নানা রং-বেরঙের কাহিনী এখন মানুষের মুখে মুখে। আর এই সমস্ত অপকর্মে জড়িতরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। এসব ঘটনা ফাঁস হওয়াতে সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। ভারসাম্যহীন কথাবার্তা বলছেন। একদিকে বলছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ, আবার অন্যদিকে বলছেন অভিযোগ সত্য। এ কথার কী অর্থ হতে পারে তা আমার জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ হবে কেন?’

‘এরা বিভ্রান্তিতে ভুগছেন, কারণ এই দখলদার আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই ছিল ডামি সরকারকে টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্ত সৈনিক। অবৈধ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এসব কর্মকর্তাই ভোটারদেরকে নতজানু রাখতে রীতিমতো ব্লাড-স্পোর্ট বা রক্ত খেলায় মেতেছিল। এরা জনগণকে নতজানু রাখতে রাষ্ট্রশক্তিকে যথেচ্ছাচার ব্যবহার করেছে। এরাই ডেলিবারেট কিলিং করেছে, নিয়ন্ত্রণহীন হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজ বাহিনীর সদস্যদেরকে কেন সক্রিয় হচ্ছে না সেই জন্য ভর্ৎসনা করেছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে উগ্রতা এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নিরব রাখার চেষ্টা করেছে। সেজন্যই মন্ত্রী-এমপিরা তালগোল পাকিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য রাখছেন।’

রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গীকারাবদ্ধ নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামীকাল শনিবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আমরা সমাবেশের জন্য চিঠি পুলিশ কমিশনারের দফতরে পাঠিয়েছি। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে। সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি আগামীকাল একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকাবাসীসহ দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরকে যথাসময়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানান রিজভী।