গরুর মাংস খুব পছন্দ করেন নুরউদ্দিন। পছন্দ করেন আমার হাতে বানানো কেকও। এ দুই খাবারের অনেক রকম মেন্যু থাকবে মঙ্গলবার রাতে। রান্না করব বিভিন্ন পদের সেমাই। এবারের ঈদে সেমাইও রান্না করিনি আমরা। ও এলেই ঈদের আনন্দ করব। করব কেনাকাটাও। ফুল দিয়ে বরণ করব ওকে। শুনব দুঃসহ সেইসব দিনের কথা।’ এসব কথা বলছিলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের জেনারেল স্টুয়ার্ড নুরউদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। নুরউদ্দিন জিম্মি হওয়া সেই ২৩ নাবিকের একজন।

শুধু নুরউদ্দিনের স্ত্রী নন; জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা অন্য নাবিকদের স্বজনও করছেন নানা পরিকল্পনা। নাবিকরা তীরে এলে জেটিতে গিয়ে তাদের বরণ করতে চান স্বজন সবাই। এ জন্য লাগবে মালিকপক্ষের সবুজ সংকেত। কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন সেই সংকেতের জন্য। আবার কেউ বলছেন, সংকেত যা-ই হোক, বরণ করতে যাবেন তারা নদীর তীরে। তাদের একজন জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম। তিনি বললেন, ‘মনের খুব ইচ্ছা, জাহাজ থেকে নামার পরই বুকে জড়িয়ে ধরব ছেলেকে। তিন নাতিনকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।’

আজ সোমবার রাতে কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করবে এমভি আবদুল্লাহ। কাল মঙ্গলবার বিকেলে সদরঘাট জেটিতে তাদের বরণ করবেন স্বজনরা। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৪ দিন পর স্বজনের সঙ্গে মিলিত হবেন ২৩ নাবিক।

কুতুবদিয়ায় নোঙর করলে নাবিকদের আরেকটি গ্রুপ পাঠাবে জাহাজটির মালিকপক্ষ। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকদের তারা নিয়ে আসবেন তীরে। সদরঘাট জেটিতে তাদের নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম।

মেহেরুল করিম গতকাল বলেন, ‘গত ২৮ এপ্রিল দুবাই থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা জাহাজটি বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো জেটিতে নোঙর করাব না আমরা। সদরঘাটের জেটিতেই নাবিকরা নামতে পারেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। এটি শেষ করলে আমরা চূড়ান্ত সময় ও স্থান জানিয়ে দেব। প্রাথমিকভাবে আমাদের পছন্দ সদরঘাট জেটি।’ বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, রোববার সকালে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে দেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। জাহাজটি দুবাই থেকে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে এসেছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে সেগুলোর কিছু অংশ খালাস করা হবে। বাকি চুনাপাথর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এনে খালাস করবে জাহাজটি।