ময়মনসিংহের ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া দেড় বছর বয়সী মেহেদী হাসান ওরফে জায়েদকে তার মামার জিম্মায় দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার বিচারপতি এম আর হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত ভালুকা মডেল থানায় দায়ের করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী গাড়ি এবং আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার জন্য ভালুকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২০ মের মধ্যে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল, সুরতহাল প্রতিবেদন ও অন্যান্য তথ্য আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিআইজিকে মামলাটি তদারকি করতে বলা হয়েছে। র‍্যাবের মহাপরিচালককে আসামি গ্রেপ্তারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তিনি বলেন, আদালত ভিন্নরূপ দাবি না থাকায় শিশুটির তত্ত্বাবধান ও হেফাজতের জন্য তার মামার কাছে অস্থায়ীভাবে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। শিশুটির আরও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া এবং এ ব্যাপারে পদক্ষেপগুলো প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে হবে। শিশুটির অভিভাবকত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে দরখাস্ত দাখিল ও নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ভালুকায় সড়ক দুর্ঘটনায় জায়েদা খাতুন (৩২) নামের এক মায়ের মৃত্যু হলেও কোল থেকে ছিটকে পড়ে অলৌকিকভাবে তার ছেলে জায়েদ বেঁচে যায়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে।

শিশু জায়েদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে গতকাল রবিবার তার স্বজনদের মাধ্যমে পরিচয় মিলেছে। জায়েদের মা জায়েদা খাতুন সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে।

গতকাল জায়েদার বড় ভাই রবিন মিয়া মমেক হাসপাতালে এসে মর্গে থাকা তার বোনের মরদেহ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভাগ্নে মেহেদী হাসানকে শনাক্ত করেন।

রবিন মিয়া বলেন, তার বোনের প্রথমে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বিয়ে হলেও স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেই সংসার ভেঙে যায়। এরপর নরসিংদীর পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক মিয়ার সঙ্গে জায়েদার বিয়ে হয়। স্বামী ফারুক মিয়া এর আগেও একটি বিয়ে করেন। সেই ঘরে এক স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।

এদিকে, রবিবার সকালে হাসপাতালের পরিচালকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিশুটিকে দেখতে ওয়ার্ডে যান। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক গোলাম ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটি এখন শঙ্কামুক্ত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবে সে। প্রকৃত অভিভাবক পেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জায়েদার স্বামী ফারুক মিয়াকে খুঁজছে পুলিশ। হাসপাতালে আসা স্বজনদের কেউ কেউ বলছেন, শিশুর বাবা ফারুক মিয়া হাসপাতালেই আছেন। তবে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন তিনি।

দুর্ঘটনার ব্যাপারে ভালুকা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলে, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় মা ও শিশুপুত্রকে মমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তারা জানেন না। স্থানীয় লোকজন খবর দিলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ওই নারী মারা যান। শিশুটি মমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।