আমার মা না হয়ে তুমি/ অন্য কারো মা হলে/ ভাবছ তোমায় চিনতেম না,/ যেতেম না ঐ কোলে?/ মজা আরো হত ভারি,/ দুই জায়গায় থাকত বাড়ি,/ আমি থাকতেম এই গাঁয়েতে,/ তুমি পারের গাঁয়ে।’ মায়ের সঙ্গে সন্তানের এই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক চিত্রিত করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘অন্য মা’ কবিতায়। শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, এমন মাতৃত্ব-বন্দনা চলে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে গল্প, কবিতা, গান ও চিত্রে। মায়ের ভালোবাসা, যত্ন ও ত্যাগ তুলনাহীন। মাতৃত্ব অনন্য এক সত্তা। তাই তো আনুষ্ঠানিকভাবে মাতৃত্বের স্বীকৃতি দিতে চিরকালই অনুভব করেছে সমাজ। ফলে কালক্রমে একটি বিশেষ দিনে, একটু আয়োজন করে মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় মানুষ। সেই দিবসটিই হচ্ছে মা দিবস। এই উদযাপনেরও রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস।
আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ^ব্যাপী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করতে দিবসটি উদযাপন করা হয়। পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। কবে থেকে, কীভাবে মা দিবসের প্রচলন হলো জানতে হলে একটু পেছনে তাকাতে হবে। ধারণা করা হয়, মা দিবসের প্রচলন হয় প্রাচীন গ্রিসের মাতৃরূপী দেবী সিবেলের এবং প্রাচীন রোমান দেবী জুনোর আরাধনা থেকে। এ ছাড়া প্রাচীন মিসর, চীন ও ভারতেও সমবেত হয়ে মাতৃমূর্তির প্রতি সম্মান জানানোর ইতিহাস রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে মা ও মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ষোড়শ শতকে এটি ইংল্যান্ডে মাদারিং সানডে বলে পরিচিতি পায়। তবে আনুষ্ঠানিকতা পায় যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রক্লামেশন’ বা
‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্কিন সমাজকর্মী আনা রিভিজ জার্ভিস গৃহযুদ্ধের পৈচাশিকতা বন্ধ করে শান্তির প্রত্যাশায় একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস মায়ের সম্মানে সরকারিভাবে মা দিবস পালনের প্রচারণা চালান।
এর তিন বছর পর ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন করা হয়। ১৯১২ সালে আনা মেরি স্থাপন করেন মাদার্স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় দিবসটিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেডিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
এরপর থেকে সারাবিশে^ দিবসটি উদযাপন করা হয়ে আসছে। যদিও কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেন, মাকে ভালোবাসতে কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন প্রতিক্ষণই মাকে ভালোবাসা জানানো যায়। আবার উল্টো মতোও আছে, কর্মব্যস্ততায় আমরা অনেকে মাকে সময় দিতে পারি না। আবার অনভ্যাসে হয়তো মুখ ফুটে মাকে ভালোবাসার কথা বলাও হয় না। এই একটি দিনে না হয় আমরা একটা উপহার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারি, মা তোমাকে ভালোবাসি!