ঈদের আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মধ্যবিত্ত মানুষেরা ‘মুখ লুকিয়ে কাঁদছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। বিশ্ব মুসলিমের এটি সর্বোচ্চ আনন্দ ও খুশীর দিন। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই এই উৎসব পরিবার স্বজন-শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু এই বছরেও জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেয়ায় জনজীবনের এই উৎসব ম্লান হয়ে হয়ে গেছে। ডামি সরকারের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হরিলুট আর মহাদুর্নীতির কারণেই মানুষের শেষ হাসিটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
‘‘দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতির কষাঘাতে জনজীবনে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। ঈদে আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। সমাজে তৈরি হয়েছে ধনী ও গরীবের বিশাল ব্যবধান। অধিকাংশ মানুষের সামান্য প্রয়োজন মিটানোই যেনো দুঃস্বপ্ন। দুঃশাসনের ছোবলে সমাজে নেমে এসেছে নৈরাজ্যের এক ঘন অন্ধকার।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগাম না টেনে বাজার সিন্ডিকেটের হোতাসহ সরকারের আস্থাভাজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ ব্যস্ত রয়েছে লুটপাট, দুর্নীতি ও বিরোধী মতকে দমন-পীড়নে।
ঈদযাত্রা ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না পাওয়া এবং বিরোধী নেতা-কর্মীদের কারা নির্যাতনের বিষয়টিও তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বাসের টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া। বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম দুর্নীতির কারখানা। ঈদ উপলক্ষে চলছে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। শ্রমিকলীগ-ছাত্রলীগের কালোবাজারি টিকিটের ব্যবসার নামে চলছে লুটতরাজ। ঈদ যাত্রায় এখন ব্ল্যাক টিকিটের চড়া দাম। জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি আর হয়রানি।
অথচ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে কোনো যানজট বা হয়রানি নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ী যেতে পারছে।’ এ যেনো ডামি দায়িত্বশীলের মুখে দায়িত্বজ্ঞানহীন তামাশার মন্তব্য… এ যেন জনগণের সাথে এক ডাহা মিথ্যাবাদীর ইয়ার্কি-তামাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঈদের প্রাক্কালে বিভিন্ন রুটে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ঘরমুখো যাত্রীরা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিমানের ভাড়া কল্পনাতীত। ট্রেনে টিকিট পাচ্ছে না মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে দিন দিন জটিলতর করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এলিট শ্রেণির বাহনে পরিণত হচ্ছে রেলওয়ে।
যারা তুলনামুলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ, তারা আসলে অনলাইনের এই জটিল ব্যবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়। ফলে একটা নিম্ন—মধ্যম আয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্রেনে চড়ারই অধিকার হারিয়ে ফেলছে। অথচ এরাই ছিলো ট্রেনের প্রকৃত যাত্রী।
‘অনেক শ্রমিক এখনো বেতন-ভাতা পায়নি’
রিজভী বলেন, ‘‘তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৬০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকেরা গত মার্চ মাসের বেতন গতকাল (সোমবার) বিকেল পর্যন্ত পাননি। ঈদের উৎসব ভাতা বা বোনাস পাননি ১৪ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ওদের ঈদের আনন্দ চোখের পানিতে ভাসছে।
রিজভী বলেন, প্রতিদিন আমাদের কেউ না কেউ হত্যা, না হয় গুম, না হয় জেলে বন্দী করা হচ্ছে, না হয় মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পযার্য়ের নেতাদের সারাদিন ধরে প্রায় প্রতিদিন আদালতে সময় পার করতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের চাকুরি নেই, বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা। ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপরে মিথ্যা মামলায় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কারাগারে কেউ মানবেতর অবস্থায় ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া হয়ে জীবনযাপন করছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত অরক্ষিত, ভিন্ন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য মনে করা, তাদের দ্বারা ব্যাংক লুট, থানা আক্রমণ এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ছবি।