আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তাদের ৭ কর্মী নিহত হওয়ার বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এই হামলাকে তাদের গুরুতর ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইসরায়েল এ ঘটনায় দুজন সামরিক কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করেছে। ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সিইও এরিন গোর বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় নিজেদের ত্রাণ কর্মীদের উপর হামলার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তদন্ত করতে পারেনি, একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করতে তারা তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের উপর নির্মমভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ডব্লিউসেকে পরিবার এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে রয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।’ খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, এরিন গোর গাজার স্থলভাগে কর্মরত ত্রাণ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলকে অবশ্যই একটি দৃশ্যমান কঠোর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে নিরাপত্তার অভাবে বেশ কয়েকটি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা গাজায় তাদের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রেখেছে। ফলে এ অঞ্চলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করছে।’
ত্রাণ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্ত করে এর ফলাফল প্রকাশের জন্য ইসরায়েল ইতিমধ্যে তার পশ্চিমা অংশীদারদের চাপের মধ্যে রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তিনি হামলার ঘটনায় ইসরায়েলি তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছেন এবং খুবই সতর্কতার সঙ্গে সেটি পর্যালোচনা করে দেখছেন। ইসরায়েল এ ঘটনায় কি পদক্ষেপ নেয় সেটিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষক করছে ইসরায়েল।
ইতিমধ্যে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা নিয়ে কিছু ডেমোক্রেটদের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। শুক্রবার সাবেক স্পিকার নেন্সি পেলোসিসহ তিন ডজনেরও বেশি কংগ্রেস ম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টোনি ব্লিঙ্কেনকে ইসরায়েলকে অস্ত্র হস্তান্তরের প্যাকেজ পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে ত্রাণ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইল্লেখ্য, ১ এপ্রিল চার মিনিটের ব্যবধানে চালানো হামলায় মানবিক কাজে নিয়োজিত ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) কনভয়ে ৩টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে তাদের ৭ জন কর্মী প্রাণ হারায়।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) আইডিএফ থেকে অনুমোদিত এ সাহায্য সংস্থাটির উপর হামলার ঘটনাকে নিজেদের গুরুতর ভুল বলে স্বীকার করে নিয়েছে ইসরায়েল।
আইডিএফ বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) কনভয়ের আশেপাশে অনেক সশস্ত্র বন্দুকধারীকে দেখা গেছে। আর এ কারণেই ড্রোন অপারেটররা ভুল করে গাড়িগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এ ঘটনায় আইডিএফের পক্ষ তেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।
হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে একজন কর্নেল এবং একজন মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩ জন আইডিএফ কমান্ডারকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরস্কার করা হয়েছে। হামলায় অভিযুক্ত ড্রোন ইউনিটটিকে ইতিমধ্যে ডি কমিশন্ড (দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার) করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব লর্ড ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ইসরালের প্রাথমিক তদন্তের ফলাফল খুব সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে ।’ দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার ঘটনাকে প্রথম পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে করা এক পোষ্টে তিনি বলেন, ‘এই ফলাফলগুলি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা উচিত এবং স্বচ্ছতার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বাধীন পর্যালোচনার অনুসরণ করা উচিত।’