বিভিন্ন তহবিল থেকে ৫৬ লাখ আট হাজার ৮৮৬ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. হুমায়ুন কবির মজুমদারকে শাস্তিমূলক বদলি ভাবে তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার পর চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ও দূর্নীতি মামলার আসামীকে আবারও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
গত ৩১ মে ২০২৪ রাষ্ট্রপতির আদেশে উপসচিব (সরকারি কলেজ-২) মোসা: রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারী করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সরকারি কলেজ শাখার উপ-সচিব চৌধুরী সামিনা ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই আদেশে বিসিএস (সাধারণ) ক্যাডারের কর্মকর্তাকে (প্রফেসর ড. মো. হুমায়ুন কবির, অধ্যক্ষ, এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা) পুনারাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিজ বেতন ও বেতনক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে বদলি/পদায়ন করা হলো।
গত বছরের ৪ জুনের মধ্যে তাকে কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন বলে ঘোষনা করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬/২০১৭ অর্থ বছরে কলেজ তহবিলের বিভিন্ন খাত হতে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির মজুমদারের বিরুদ্ধে। এরই আলোকে পাবনার দুর্নীতি দমন জেলা কার্যালয় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
দীর্ঘ দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে ২০২১ সালে জুন মাসে তার বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত হয়। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৮৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মেলে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, কলেজের ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অধ্যক্ষ ছাত্র সংসদ তহবিল থেকে ১৫টি চেকের মাধ্যমে পাঁচ জন ছাত্রনেতা ও কর্মচারীর নামে পাঁচ লাখ দুই হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। কলেজের উন্নয়ন তহবিল থেকে উন্নয়ন কমিটির সুপারিশ ছাড়াই কোটেশন ছাড়া ভুয়া আবেদন, বিল, ভাউচার করে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ২৩৮ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। কলেজের বিবিধ তহবিল থেকেও একইভাবে ভুয়া আবেদন ও বিল ভাউচার করে ৩৭টি চেকের মাধ্যমে ১৩ লাখ চার হাজার ৪২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া কলেজের বেসরকারি আদায় তহবিল থেকে ভর্তি কার্যক্রম ও ফরম পূরণ বাবদ নির্ধারিত ফিসহ, অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে এ ফান্ডে জমা দিয়ে পরে ২৮টি চেকের মাধ্যমে ১৮ লাখ তিন হাজার ৭০৬ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৯ মার্চ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে তাকে তলব করা হয়। পরে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পাবনা অঞ্চলের দুদকের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্র ধর। পরের দিনও তাকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. হুমায়ুন কবির মজুমদারের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে পাবনার সচেতন মহলের দাবী, একজন স্বীকৃত দূর্নীতিবাজ ও মামলার আসামীকে কি করে মামলা নিষ্পত্তি না হতেই আবারও ওএসডি থেকে একটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক পদে পদায়ন করা হলো। বিষয়টি অস্পষ্ট ও অনৈতিক কর্মকান্ডের গন্ধ থাকতে পারে বলে মনে হয়।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী বলেন, অনেক অধ্যক্ষের অধীনে কাজ করেছি। কিন্তু উনার মতো বদমেজাজী, অনিয়মের হোতা পায়নি। অধিকাংশ কাজে তাকে টাকা দিতে হতো। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রী নাম ভাঙিয়ে দাপট ও ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। রাতে নিজ অফিসে মাদকের আখড়াসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের হয়রানি করেছে ইচ্ছেমাফিক।