মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যের জাতিগত বিদ্রোহীদের সশস্ত্র বাহিনী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) চীন সীমান্তের একটি বাণিজ্যিক শহর দখল করে নেয়ার দাবি করেছে। কেআইএ ও এর সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বলেছে, ২১ দিনের মধ্যে কাচিন রাজ্যে নয়টি জান্তা ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ও ৫০টিরও বেশি আউটপোস্ট দখল করার পর তারা এবার রাজ্যের মিয়ানমার-চীন বাণিজ্য রুটটি দখলের পথে রয়েছে।
দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেআইএ, কাচিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ), আরাকান আর্মি (এএ) ও অন্যান্য সশস্ত্র বিদ্রোহীদের জোট গত ৭ মার্চ কাচিন রাজ্যে তাদের আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকে বিদ্রোহীদের জোট তানাই, সুমপ্রাবুম, ওয়াংমাউ, মোমাউক, মানসি শহর ও দতফোনিয়া উপ শহরে একের পর এক ঘাঁটি ও ফাঁড়ি দখল করতে থাকে।
কেআইএ জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের জোট সর্বশেষ ধাক্কায় এই সপ্তাহে মোমাউক শহরাঞ্চলের সীমান্ত-বাণিজ্য শহর লুয়েগেল (লুয়েজে) এর চারপাশে ছয়টি ফাঁড়ির দখল নেয়। এর মধ্যে ইয়াও ইয়োন, মাদা বাম ও লোডমনের মতো প্রধান প্রধান জান্তা ঘাঁটিগুলোও আছে।
লুয়েগেল চীনের সঙ্গে কাচিন সীমান্ত বাণিজ্যের পাঁচটি অফিসিয়াল পোস্টের মধ্যে একটি। তবে ভামো ও লুয়েগেলের মধ্যে পশ্চিম-পূর্ব দিকে চলে যাওয়া ৯০ কিলোমিটার সড়কে আরও দুটি জান্তা ঘাঁটি এখনও দখল করা বাকী রয়েছে।
তবে কেআইএ জানিয়েছে, ‘লুয়েগেলে চীন-মিয়ানমার বাণিজ্য অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান দুটি ফাঁড়ি ইয়াও ইয়োন ও মাদা বুম তাদের দখলে চলে এসেছে। এই দুটি ঘাঁটিতে লড়াইয়ে জান্তার বাহিনী ব্যাপক হতাহতের শিকার হয়ে জঙ্গলে ও চীনে পালিয়ে গেছে।’
লুয়েগেল লাইজা শহরে কেআইএ সদর দপ্তরের দক্ষিণে অবস্থিত। কেআইএ ও এর মিত্ররা বলেছে, তারা সীমান্ত শহরটির বেশিরভাগ দখল করে নিয়েছে এবং জান্তার বাহিনীকে উৎখাত করছে।
মঙ্গলবার (২৬ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ৭৯তম সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করে। তার একদিন আগে মোমাউক শহরের লাইট আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৩৮৭ ও ৩২০ এর হেডকোয়ার্টার এবং কোনি ল ও লোঞ্জা বামের ফাঁড়িগুলো দখল করে জান্তাকে অপমান করা হয়।
৭ মার্চ থেকে কাচিনে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় সাফল্য মোমাউক দখল। শহরটির ছয়টি জান্তা ব্যাটালিয়ন দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এগুলো হলো- আর্টিলারি ব্যাটালিয়ন ৩৭০ ও ৬১৬, এলআইবি ৪৩৮, ৩৮৭, ও ৩২০ এবং আইবি ২৩৭।
এদিকে, ভামো থেকে রাজ্যের রাজধানী মায়িতকিনা পর্যন্ত উত্তরের রাস্তায় বিদ্রোহীদের হামলার পর জান্তা সেনারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। ভামোর একজন বাসিন্দা বলেছেন, ‘ভামোতে কেআইএ শহরে আক্রমণ শুরু করলে সমস্ত জান্তা ইউনিটকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।’
বিদ্রোহীদের জোট ইতিমধ্যে লাইজার কাছে ভামো-মায়িতকিনা সড়কের সমস্ত প্রধান জান্তা ব্যাটালিয়ন ঘাঁটি ও ফাঁড়িগুলো দখল করে নিয়েছে। ভামোতে জান্তার মিলিটারি অপারেশন কমান্ড ২১ অবস্থিত।
ভামো জেলার উপরের দিকের প্রধান প্রধান ঘাঁটিগুলো বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়ায় জান্তা বাহিনী বেশ চাপে পড়েছে।