মস্কোর কনসার্ট হলে গত সপ্তাহের প্রাণঘাতী হামলার জন্য ইউক্রেন এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ভূমিকা ছিল বলে রুশ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার দাবি করেছেন। কিয়েভ ওই হামলার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা জোরালোভাবে অস্বীকার করছে, আবার ইসলামিক স্টেট গ্রুপের একটি সহযোগী দল ওই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে।
মস্কোর ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বা এফএসবির প্রধান আলেকজান্ডার বোর্টনিকভ কোনো প্রমাণ না দিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পর অনুরূপ অভিযোগ করেন। পুতিন কনসার্ট হল আক্রমনের সাথে ইউক্রেনকে সংশ্লিষ্ট করেছেন, তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজনরা ‘উগ্র ইসলামপন্থী।’
আইএসের সাথে সম্পৃক্ত একটি দল এই হামলার দায়িত্ব দাবি করেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, তাদের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে যে হামলার জন্য ওই গোষ্ঠীটিই দায়ী।
বোর্টনিকভ গত দুই দশকের মধ্যে রাশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্র যে সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে আগাম তথ্য দিয়েছিল, তা তিনি স্বীকার করছেন।
বোর্টনিকভ বিস্তারিতভাবে না বলে বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে উগ্র ইসলামপন্থীরা ওই হামলা চালিয়েছে, পশ্চিমা স্পেশাল সার্ভিসগুলো এতে সহায়তা করেছে এবং ইউক্রেনের স্পেশাল সার্ভিসগুলো এতে সরাসরি অংশ নিয়েছিল।’
তিনি পুতিনের দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন যে চার বন্দুকধারীকে গ্রেফতারের সময় তারা ইউক্রেনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাকেই তিনি প্রমাণ হিসেবে কিয়েভের ওই হামলায় সংশ্লিষ্ট বলে উপস্থাপন করেছেন।
তবে বেলারুশের কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো মঙ্গলবার বলেছেন, সন্দেহভাজনরা ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছিল। কারণ বেলারুশ সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর হবে বলে তাদের ভয় ছিল ।
তুরস্ক গিয়েছিল অভিযুক্তরা
মস্কোর অদূরে শুক্রবার ক্রোকাস সিটি হলে একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় ১৫০ জনের বেশি লোক নিহত হওয়ার ঘটনায় রাশিয়া এখনো আচ্ছন্ন। স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো প্রায় ৯০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের মাঝে দু’জন শিশুও রয়েছে।
মস্কোর একটি আদালতে রোববার হামলার দায়ে অভিযুক্ত চার ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে হাজির করা হয়। তাদের দেহে প্রচণ্ড মারধরের চিহ্ন দেখা যায়। একজনকে শুনানির সময় প্রায় অচেতন অবস্থায় দেখা গেছে।
তুরস্কের উর্ধ্বতন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন যে আক্রমণকারীদের মাঝে দু’জন ২ মার্চ একসাথে রাশিয়া যাওয়ার আগে তারা তুরস্কে ‘কিছু সময়ের জন্য’ ছিল।
সন্দেহভাজনদের একজন শামসিদিন ফরিদুনি ২০ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে প্রবেশ করেন। পরদিন ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকার একটি হোটেলে ওঠেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি হোটেল ছেড়ে দেন। অপরজনের নাম সাইদাকরামি রাচাবালিজোদা। তিনি ৫ জানুয়ারি একই এলাকার একটি হোটেল উঠেন, জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখে হোটেল ছেড়ে দেন।
ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয়ার অনুমতি না থাকার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আদেশ না থাকায় তাদেরকে অবাধে রাশিয়া ও তুরস্কে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা