রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় নিহতের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন ও মন্টু মোরলকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সগিরার পরিবার। তাদের প্রশ্ন পরিকল্পনাকারী কিভাবে খালাস পায়?
বুধবার ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি দুই আসামির ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অনাদায়ে তাদের আরো ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে।
রায় ঘোষণার পর সগিরার মেয়ে সামিয়া সাবা চৌধুরি (৩৮) বলেন, ঘটনার সময় আমার বয়স ছিল ছয় বছর। আমার মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন। তারা রায়ে খালাস পেয়ে গেছেন। পরিকল্পনাকারী কিভাবে খালাস পায়? আমরা রায়ের সন্তুষ্ট না। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।
মামলার বাদি ও সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না। দু’জনের রায়ে সন্তুষ্ট আর দু’জনের রায়ে সন্তুষ্ট নয়। রায় আরো ভালো হতে পারতো। আমরা আপিল করব।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সগিরার স্বামীর করা মামলায় মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদকে আসামি করা হয়।
২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সাথে আসামি শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, সগিরার কাজের মেয়েকে মারধর করেন আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে সগিরাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন শাহীন। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে অন্য আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করেন। চুক্তি করা ২৫ হাজার টাকার মধ্যে মারুফ রেজাকে ১৫ হাজার টাকা দেন হাসান আলী। ১০ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা বললেও আর দেননি।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত সগিরা মোর্শেদের ভাসুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পর এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১১ জানুয়ারি মামলার বাদী ও সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।