সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আবারো সংঘর্ষের ব্যাপকতা বেড়েছে। এতে রাখাইন রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে দেশটির সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘাত থামছেই না।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার পর থেকে রাত ১টা পর্যন্ত টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও পৌরসভার জালিয়াপাড়ার নাফ নদ সীমান্তের পূর্বে বসবাসকারীরা মিয়ানমারে ভারি মর্টার শেলের শব্দ শুনতে পায়।

কখনো গোলাগুলির বিকট শব্দ, কখনো মর্টার শেল এসে পড়ে। এর মধ্যেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। এ আতঙ্ক কাটবে কবে জানেন না তারা।

বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারি লোকজন দু-একদিন শান্তিতে ঘুমিয়েছিলেন। মনে করেছিলেন মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন ঘটনায় আর তাদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারবেন। এই লক্ষ্যে সীমান্তবাসী তাদের স্ব স্ব কাজে যোগ দেন। কৃষকরা কৃষি কাজে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় মন দেন।

বিগত ১৩ দিন ধরে বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুম উখিয়ার থাইংখালী রহমতেরবিল ও আনজুমান সীমান্তে কোনো প্রকার গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলি ও বোমা হামলায় আতঙ্কিত ছিল। দু-একদিন শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত শান্ত থাকার পর ফের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর সংঘর্ষে মর্টার শেল ও মুহুর্মুহু গুলির শব্দে কাঁপছে শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত। এতে শঙ্কিত সীমান্তবাসী।

মিয়ানমারের মংডু থেকে কলিম উল্লাহ জানান, মিয়ানমারের রাখাইন হাসপাতালে জান্তা বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে হাসপাতাল বাজার ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।

শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তে বসবাসকারি জেলে মোহাম্মদ ইসহাক জানান, ‘তিন দিন শান্ত থাকায় সাগরে গিয়েছিলাম মাছ ধরতে। হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। দেরি না করে ভয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। গোলাগুলির শব্দে নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে যেতে পারছি না।’

মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে সাগরে মাছ ধরতে যেতে না পারায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেলেরা। জেলেরা মাছ ধরতে যেতে না পারলে অনাহারে থাকতে হবে অনেক জেলের এমনটি জানিয়েছেন শাহপরীরদ্বীপ এলাকার দিল মোহাম্মদ। মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে টেকনাফ সেন্টমার্টিনে পর্যটন খাতে মারাত্মক ধ্স নামতে শুরু করেছে।

সাবরাং ইউনিয়নের মেম্বার রেজাউল করিম জানান, রাখাইনের অস্থিরতার কারণে এলাকাবাসীর মনে যেন স্বস্তি নেই।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো: নাছির বলেন, ‘রাত ৯টার পর থেকে আবারো থেমে থেমে মায়ানমারে ভারি মর্টার শেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কারণ আমার বাড়ি সীমান্তে বেড়িবাঁধের পাশে। তাই শব্দ শুনতে পাই। এমনভাবে শব্দ হয় যেন নাফ নদে এসে পড়েছে। গত তিন দিন বন্ধ থাকলেও আবারো রাত থেকে মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।’

পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মো: ইসহাক বলেন, ‘রাতে মায়ানমার সীমান্তে থেমে থেমে কয়েকটি মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। কয়েকদিন শব্দ শোনা না গেলেও শুক্রবার রাত থেকে আবারো শোনা যায়।’

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত তিনদিন শাহপরীর দ্বীপ-সীমান্তে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়নি। সীমান্ত এলাকার পরিবেশ শান্ত ছিল। হঠাৎ শুক্রবার রাত ৯টার পর থেকে থেমে থেমে বিকট মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়।’

এদিকে, শুক্রবার বিকেল ৫টায় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদ-সীমান্ত এলাকায় তিনটি মর্টার শেলের শব্দ শুনতে পান স্থানীয় জেলেরা। তবে শনিবার সকাল থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।