বাবা আমি জীবনেও আর মারামারি, খারাপ কাজ করবো না। তোমরা আমারে এখান থেকে নিয়া যাও। ওরা আমাকে বাথরুম, থালা বাসন ধোয়ায়। না ধুইলে আমারে অনেক মারধর করে। মৃত্যুর প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন আগে মারুফের মা ইয়াসমিন বেগমকে সাথে নিয়ে তারা বাবা টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারুফের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কান্না করে বাবা-মা’কে মারুফ এ কথা বলে। গাজীপুর টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) কিশোর মারুফ আহমেদ (১৬) বুধবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। এর আগে শনিবার (১০ ফেব্রæয়ারি) অসুস্থ অবস্থায় শিশু মারুফ আহমেদকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহত মারুফ কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম গ্রামের রফিক আহমেদের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ কেন্দ্রের ভিতরে নির্যাতনের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারুফের মৃত্যু হয়। তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) নিহত মারুফের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে বলে জানান রাজধানীর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানারুল হক।
মারুফের চাচা সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম গ্রামে। সে তার বাবা-মার সাথে রাজধানীর খিলক্ষেত দর্জিবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। মারুফ কিছুদিন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলেও পরে ছেড়ে দিয়ে দিনমজুরি কাজ করি। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মারুফ ছিল সবার বড়।
নিহতের বাবা রফিক আহমেদ অভিযোগ করেন, গত ২৭ জানুয়ারি খিলক্ষেত এলাকায় এক ঝালমুড়ি ওয়ালার সঙ্গে কয়েকজন ছেলের ঝগড়া হয়। সেখানে মারুফ দাঁড়িয়ে ছিল। ওই সময় খিলক্ষেত থানা পুলিশ দুই ছেলের সাথে মারুফকেও ধরে নিয়ে যায়। ২৮ জানুয়ারি আদালতে চালান করে দেয়। খবর পেয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি মারুফের নামে ডাকাতি মামলা হয়েছে। আদালত থেকে তাকে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন আগে মারুফের মা ইয়াসমিন বেগমকে নিয়ে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারুফের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। তখন মারুফ কান্না করে বলে বাবা আমি জীবনেও আর মারামারি, খারাপ কাজ করবো না। তোমরা আমারে এখান থেকে নিয়া যাও। ওরা আমাকে বাথরুম, থালা বাসন ধোয়ায়। না ধুইলে আমারে অনেক মারধর করে।
গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গত ১২ ফেব্রæয়ারি ফোন করে জানায় মারুফ অসুস্থ। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ছেলে অচেতন অবস্থায় আছে। তার সাথে কোন কথা বলতে পারি নাই। মারুফের শরীর, হাতের কনুই এবং পিঠের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত দেখেছি। আমার ছেলেরে ওরা মারধর করেছে। মারধরের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই।
রাজধানীর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানারুল হক সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ওই কিশোরের ডান চোখের পাশে কালা ছিলা, ডান ও বাম হাতের কনুইতে ছিলা, দুই পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলা। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) নিহত মারুফের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
প্রাথমিক তদন্তে এসআই সুরতহালে উল্লেখ করেন, গাজীপুর টঙ্গি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) তত্বাবধায়ক দেলোয়ার হোসেনের অপমৃত্যুর মামলার এজহার থেকে জানা যায়, খিলক্ষেত থানার মামলা নম্বর ২৯(১)২৪, ২৮/১/২৪। উক্ত বন্দি গত ১০ ফেব্রæয়ারি দুপুড়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পরে। সাথে সাথে তাকে গাজীপুর আহসানউল্লাহ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মারুফ মারা যায়।