জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন মাদক কারবারি। তিনি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্রি করতেন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মামুন ও মুরাদকে গতকাল গ্রেফতার করে র্যাব। বহিরাগত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মামুনের।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চারজনকে আটক করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ঢাকার আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৪, র্যাব-২ এবং র্যাব-৫ এর অভিযানিক দল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী মো: মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন এবং অপর একটি দল নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অন্যতম আসামি মো: মুরাদকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, মামুন প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। মামুন কক্সাবাজারের টেকনাফ হতে প্রতিমাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সরবরাহ করতো। গ্রেফতারকৃত মামুনের সাথে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদ মিয়া ওরফে রবিনের মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতো।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করায় পরিবারের সাথে তার সখ্যতা তৈরি হয়। ঘটনার পূর্বে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর গ্রেফতারকৃত মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই হলে থাকার ব্যবস্থা করেছে বিধায় সে এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবে। তাই গ্রেফতারকৃত মামুন ওই নারীর স্বামী জাহিদকে মোস্তাফিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা করতে বলে। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী গ্রেফতারকৃত মামুনের কথামতো ওইদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে। পরে গ্রেফতারকৃত মামুন ওই নারীর স্বামীকে তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মামুন কৌশলে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে ফোন দিতে বলে। পরে ওই নারীর স্বামী ফোন করে গ্রেফতারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আসতে বলে। রাত ৯টায় ওই নারী তার স্বামীর কথামতো গ্রেফতারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড় একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসে। ওই সময় পূর্বপরিকল্পনামতো মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে তার স্বামীকে হলের ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে বলে। এসময় গ্রেফতারকৃত মামুন ও মামলার আসামি মোস্তাফিজ ভুক্তভোগী ওই নারীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে।
গ্রেফতারকৃত মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে ওই নারীর স্বামীকেও বাসায় চলে যেতে বলে। পরে তার স্বামী ধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত মামুন প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে চাকরি নেয়। পরবর্তী সময়ে সে আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরির পাশাপাশি মাদক কারবারের সাথে জড়িত হয়। গ্রেফতারকৃত মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতো।