আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে তাড়াহুড়ো না করে আরো আলোচনা করলে ভালো হয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইএলও’র প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: এহছানে এলাহী, আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো: গোলাম সারওয়ার, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পাউটিয়াইনেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার নীরন রামজুথান, টেকনিক্যাল অফিসার চয়নিচ থামপারিপাত্র, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মো: সাইদুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার চৌধুরী আলবাব কাদিরসহ আইন মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আজ আমরা শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে বসেছিলাম। এর আগে যখন বসেছিলাম, তখন যেসব সংশোধনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে আরো কিছু নতুন সংশোধনী আনার ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছিল। তাছাড়া এবিষয়ে আইএলও-ও কিছু বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জেনেভা থেকে আইএলও’র চারজনের একটি টিমও আজকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। বৈঠকে শ্রম আইনের প্রায় প্রত্যেকটা ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম, শ্রম আইনটা পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনে পাস করার জন্য। কিন্তু আইএলও প্রতিনিধিদল বলেছেন, তাড়াহুড়ো না করে, আলোচনা করে আরো কিছু করতে পারলে ভালো হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তাদের পরিষ্কারভাবে বলেছি যে আইএলও’তে আমাদের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে একটা অভিযোগ ঝুলে আছে। প্রত্যেক মার্চ মাসেই বলা হয়, এটার বিষয়ে মার্চ মাসে সিদ্ধান্ত হবে না, নভেম্বরে হবে। আবার নভেম্বরে বলা হয়- এবার হবে না, মার্চে হবে। আমি সেজন্য পরিষ্কারভাবে বলেছি যে আগামী মার্চ মাসের গভর্নিং বডির মিটিংয়ে যদি বলেন, এটা আবার নভেম্বরে যাবে। সেটা আমরা মেনে নিতে রাজি না। তখন তারা বলেছেন, কমপ্রিহেন্সিভ লেবার অ্যাক্ট (সমন্বিত শ্রম আইন) তাদের পরামর্শ মিলিয়ে যদি করতে পারি, তাহলে সেটা এই মার্চ মাসে আমাদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা হবে না, বরং আমরা যে আলোচনাগুলো করছি, সেটার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন নীতিনির্ধারকরা। এই আইনের কিছুকিছু বিষয় আছে, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথেও আলাপ করতে হবে। তাই আমরা দুটি সিদ্ধান্তে এসেছি। একটা হচ্ছে এই মিটিং আবারো অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আইএলও’র উদ্যোগে একটা স্টেকহোল্ডার ফ্যাসেলিটি মিটিং হবে। সেখানে যেসব ইস্যু নিয়ে আমাদের সাথে তাদের মতপার্থক্য আছে, সেগুলো আলোচনা হবে।’

আজ তারা কী পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, “তারা বলছেন, ‘সি ম্যান’-এর নাম বদলিয়ে ‘সি ফেয়ারার’ নাম করা। ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের ওয়ার্কার বলা। তিনি বলেন, ‘একটা কথা আসছিল ইউনিভার্সিটি টিচারদের ওয়ার্কার বলতে হবে, আমি সেটা নাকচ করে দিয়েছি। আমি বলেছি, ইউনিভার্সিটি টিচারদের আমরা ওয়ার্কার বলতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে, ইউনিভার্সিটি টিচাররাও চান না যে তাদের ওয়ার্কার বলতে এবং ওয়ার্কারের সংজ্ঞায় আনতে, আমরাও চাই না।”

ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘১০ শতাংশ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। আগে ছিল ১৫ শতাংশ হবে শুধু ৩ হাজার বা তার ঊর্ধ্বে যেসব কারখানা শ্রমিক আছে তাদের। এখন আমরা সেটাও তুলে দিচ্ছি। সকল শ্রমিকদের ব্যাপারে ১৫ শতাংশ কাজ করবে।’