মিয়ানমারের জান্তা সরকার গত তিন দিনে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনের (ইএও) কাছে আরও কয়েকটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এছাড়াও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় ৬২ জন সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছে।

আজ সোমবার ইরাবতীর খবরে বলে হয়, সাগাইং, মাগউই ও মান্দালে অঞ্চল এবং কাচিন ও কারেন প্রদেশে হতাহত ও ঘাঁটি দখলের ঘটনা ঘটেছে। তবে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ইরাবতী পিডিএফ ও ইএও থেকে প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে।

জান্তা সরকার পিডিএফের নিয়ন্ত্রণ থেকে সাগাইং শহর পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। অং সান সু চিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের (এনইউজি) সামরিক শাখা হচ্ছে পিডিএফ।

পিডিএফের হোমালিন গ্রুপ জানিয়েছে, মিয়ানমারের শাসক বাহিনী গত শনিবার সাগাইং অঞ্চলের হোমলিন টাউনশিপের শোয়ে পাই আয়ে শহরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে চলে যায়। পরে পিডিএফ বাহিনী শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পিডিএফ বাহিনী গত বছরের ২২ নভেম্বর হোমলিন দখল করেছিল। পরে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে প্রায় ৪০০ সেনা সদস্য এবং তাদের মিত্র শান্নি ন্যাশনালিটিস আর্মি (এসএনএ) শহরটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। সামরিক জান্তার ফেলে যাওয়া এলাকায় ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হয় আরও ৪০ সেনা সদস্য।

মাগউই গ্রামে জান্তার বোমাবর্ষণ, লুটপাট

ইয়াসাগাইও পিডিএফ বলেছে, শনিবার জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন-২৫৮ বাহিনীর প্রায় ১০০ সদস্যের ইউনিটের ওপর পিডিএফ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। পিডিএফ জানায়, ওই এলাকায় ড্রোন হামলায় সামরিক বাহিনীর দুই সদস্য নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।

শনিবার মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফ ও অন্য একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী গ্রেনেড ও ৪০-এমএম বিস্ফোরক ব্যবহার করে ইয়াসাগাইও শহরে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত দুজন আহত হয়েছেন।

মান্দালেতে অতর্কিত হামলা

মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফ বলেছে, তারা ও মান্দালে ডিস্ট্রিক্ট পিডিএফ ব্যাটালিয়ন-৩ শনিবার ১০টি ভূমিমাইন ব্যবহার করে নাটোগাই শহরে সেনাবাহিনীর ট্রাকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। হামলায় নিহত না হলেও ভূমিমাইনের বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য নিহত হয়েছেন।

মান্দালেতে ১৬ সেনা নিহত

নাটোগাই আঞ্চলের পিডিএফ জানায়, শুক্রবার মান্দালে অঞ্চলের মাইনগিয়ান শহরের কাছে সান পিয়া গ্রামে সেনাঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের যৌথ হামলায় জান্তা বাহিনীর অন্তত ১৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। ঘাঁটিতে ২০ সেনাসদস্য ছিলেন। এ সময় জান্তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্র জব্দ করা হয়। সংঘর্ষে মাইনগিয়ান ব্ল্যাক টাইগার পিডিএফের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন।

কাচিনদের দখলে আরেকটি ঘাঁটি

স্থানীয় কাচিন গণমাধ্যমের এক খবরে বলা হয়, কাচিন প্রদেশের পাকান্ত শহরের নান্ত তেইন এলাকায় রোববার প্রভাবশালী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) বিদ্রোহীরা জান্তার আরেকটি ঘাঁটি দখল করেছে।

কেআইএ বিদ্রোহীরা ওই ঘাঁটির চারদিক ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে অবরোধ করে রেখেছিল। রোববার বিদ্রোহীদের হামলার পর ঘাঁটিতে আট সেনাসদস্যের মরদেহ পাওয়া যায়।

কারেনে জান্তার ঘাঁটি দখল

এনইউজি জানায়, রোববার পিডিএফ ও কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (কেএনএলএ) বিদ্রোহীরা কারেন প্রদেশের থানডাওঙ্গি শহরে সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় জান্তা বাহিনীর অন্তত ২০ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিন দিনের লড়াই শেষে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের সামরিক শাখা কেএনএলএ ও পিডিএফ মাইন লুইন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। বিদ্রোহীরা ঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও খাবার উদ্ধার করেছে।