জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
জানা যায়, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন।
এই পরিচয়ের সুত্রে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে গৃহবধুর স্বামীকে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। তার প্রেক্ষিতে মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী নারী। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভিতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। পরে সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন। আমি তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।
ওই নারী আরও বলেন, ‘এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিলো। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুর রাসিক বলেন, ‘ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’