প্রায় এক যুগ পরে নারায়নগঞ্জের মাটিতে পা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি। দেশ ও জনগের কল্যানে কাজ করছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট ছিল নির্চানী মাঠে। সেই নির্বাচনে শুধুমাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩৩টি সিট। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০ সিট। বাকিগুলো আমাদের জোটের প্রার্থীরা পেয়েছিলো। এই ভরাডুবির পর থেকেই বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনো চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল ভোটাধিকার থেকে। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে। আজকে ৪ তারিখ। ৭ তারিখে নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে অনুরোধ করব, সবাই শান্তি পূর্ণভাবে থাকবেন। প্রত্যেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোটের অধিকার, যেটা মিলিটারি ডিকটেটররা কেড়ে নিয়েছিল এবং আমরা যেটা ফিরিয়ে এনেছি, সেই অধিকার প্রয়োগ করবেন। আজ বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই অধিকার সম্পর্কে সচেতন। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ৭ তারিখে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান।’
আওয়ামীলগি সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার আটশ’র বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ। বিএনপি শুধু এটাই পারে। সাধারন মানুষকে কিছু দিতে পারে না।
আজ বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ নির্বাচনী জনসভায় ভাষন দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির দু:শাসন, দুর্নীতি আর সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্র আর ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিতে ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করছে’।
নারায়ণগঞ্জকে স্মার্ট সিটি বানানোর ঘোষণা দিয়ে সবাইকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা সবাইকে নৌকা মার্কা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে দেশ ও জনগনের কল্যানে কাজ করার আহবান জানান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর পেছনের দিকে তাকাবে না, এগিয়ে যাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। নৌকা মার্কা দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আর এই নৌকা মার্কাই উন্নত দেশ গড়ে তুলবে। আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়েছে, আর বিএনপি পিছিয়েছে। বিএনপির দুঃশাসনে সবাই ভীত। বোমা হামলা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ—এসবই বিএনপির কাজ।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক মনে করেছিল, তারা টাকা না দিলে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে না। কিন্তু আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির কথা বলেছিল তারা। আমি বলেছিলাম, প্রমাণ দিতে হবে। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলা হয়েছিল কানাডার কোর্টে। কোর্ট বলেছিল, এখানে দুর্নীতি হয়নি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আমরা তা করতে পেরেছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন–কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। সত্যই এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা আজকে উন্নয়ন এনে দিয়েছে। এই নৌকাই হবে আগামী দিনের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে সকল প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাতের সঞ্চালনায় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম প্রমুখ।