ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।

ইসরায়েলি এই বর্বর হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা রোববার গভীর রাতে বলেছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, ‘আল-মাগাজি ক্যাম্পের জনাকীর্ণ আবাসিক চত্বরে যা সংঘটিত হচ্ছে তা আসলে গণহত্যা।’

আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বর্বর এই হামলায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে এবং হামলায় বেশ কয়েকটি বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলার পর সেখানকার মানুষ বেঁচে যাওয়া লোকদের খুঁজে বের করার চেষ্টায় ধ্বংসস্তূপের ভেতরে তল্লাশি করছে।

ইসরায়েলি এই হামলায় মেয়ে এবং নাতিসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছেন আহমেদ তুরোকমানি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে টার্গেট করা হয়েছিল। যাইহোক, গাজায় কোনও নিরাপদ স্থান নেই।’

আল জাজিরার তারেক আবু আজউম দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে জানিয়েছেন, আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরটি গাজা উপত্যকার মাঝখানে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এর আগে গাজার ফিলিস্তিনিদের যে জায়গাগুলো থেকে সরে যেতে বলেছিল তার মধ্যে এটি অন্যতম। হামলা চালিয়ে এখন ক্যাম্পটিকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া’ হয়েছে।

তারেক আবু আজউম আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে হতাহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে তথ্য রয়েছে। নিহতদের মধ্যে একটি দুই সপ্তাহ বয়সী শিশুও রয়েছে যাকে এই গণহত্যার সময় ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি এই হামলাকে গত সপ্তাহে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হওয়া হামলার সাথে তুলনা করেন, সেখানে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৯০ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়া আল-মাগাজি ক্যাম্পে গত মাসেও হামলা হয়। সেসময় এই শরণার্থী শিবিরে অন্তত ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।

আবু আজউম বলেন, গত কয়েকদিনে ক্যাম্পের আশপাশের এলাকাগুলো তীব্র ইসরায়েলি গোলাবর্ষণের শিকার হয়েছে।

শিবিরের নিকটতম হাসপাতালটি হচ্ছে আল-আকসা হাসপাতাল। কিন্তু গাজাজুড়ে অবিরাম ইসরায়েলি হামলার ফলে স্বাস্থ্য অবকাঠামোগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আজউম বলেন, ‘গাজা উপত্যকার সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে এবং এটি পতনের দ্বারপ্রান্তে।’

এদিকে আল-মাগাজি ক্যাম্পে বিমান হামলাকে ‘ভয়াবহ গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে হামাস। একইসঙ্গে এটিকে ‘নতুন যুদ্ধাপরাধ’ বলেও অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্রের কার্যালয় বলেছে, তারা হামলার রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে।