কথায় বলে, সাগর যাকে চায় তাকে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দেয়। আবার সাগর যার ওপর ক্ষুব্ধ তাকে রাতারাতি ফকির বানিয়ে দেয়। কথাটি সত্য হলো কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের এক জেলের বেলায়। যার জালে একসাথে ধরা পড়েছে ১৫৯টি কালো পোয়া। মাছের দাম হাঁকানো হয়েছে দুই কোটি টাকা।

ওই জেলেরে নাম মোজাম্মেল বহদ্দার। তার বাড়ি ধলঘাটা ইউনিয়নের সরিতলা গ্রামে। শুক্রবার সকালে মহেশখালী সংলগ্ন পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তার জালে মাছগুলো ধরা পড়ে। প্রতিটি মাছের ওজন সাত থেকে দশ কেজির উপরে। মাছগুলোর দাম হাঁকানো হয়েছে দুই কোটি টাকা।

ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু জানান, মোজাম্মেলের জালে ১৫৯টি কালো পোপা ধরা পড়েছে। মোজাম্মেল একজন ক্ষুদ্র পুঁজির মৎস্যজীবী। তার পরিবারের দিকে আল্লাহ চোখ তুলে তাকিয়েছে। এটা আল্লাহর নিয়ামত।

তিনি জানান, এই পোয়া মাছগুলোর দাম হাঁকানো হয়েছে দুই কোটি টাকা। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা এক কোটি টাকা দর দিয়েছে। আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় তিনি পোয়া মাছ নিয়ে চট্টগ্রামে গেছে।

কালো পোপা যেহেতু খুবই দামি মাছ। তাই মোজাম্মেলএক কোটিরও বেশি দাম পেতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯টি কালো পোয়া মাছ ধরা পড়ার খবরে পুরো ধলঘাটায় হৈচৈ পড়ে যায়। এলাকার অনেক লোকজন মাছগুলো দেখতে যায় সাগর পাড়ে।

মোজাম্মেল বহদ্দারের আত্মীয় আরিফুল ইসলাম জানান, মোজাম্মেল একজন গরীব মৎস্যজীবী। তিনি ধারদেনা করে ফিশিং বোটটি তৈরি করে মাছ শিকার করছেন। তার জালে এক রাতেই কোটি টাকার পোয়া মাছ ধরা পড়ে তার কপাল ফিরেছে। এতে এলাকাবাসীরও খুশি।

চেয়ারম্যান জানান, ইতোমধ্যে মৎস্যজীজী মোজাম্মেল বহদ্দার ১৫৯টি পোয়া মাছ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। সেখানে পোয়া মাছ বিক্রি করবেন।

বিশিষ্ট সমুদ্র বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, এই পোয়া মাছের বৈজ্ঞানিক নাম প্রোটোনিবিয়া ডায়াকানথুস (protonibea diacanthus)। কালো পোয়া মাছটির এয়ার ব্লাডার বা বায়ু থলি দিয়ে মূল্যবান সার্জিক্যাল সুতা তৈরি হয়। এই জন্য বড়ো পোয়া মাছ ধরা পড়লে ব্যবসায়ীরা দাম দিয়ে কিনে নেয়।

কালো পোয়া চামড়া দিয়ে জেলাটিন তৈরি করা হয়। মাছটি সর্বোচ্চ ১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা এবং ওজনে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষ মাছের বায়ু থলি স্ত্রী মাছের চেয়ে দামে বেশি। আমাদের দেশ থেকে এ মাছের বায়ু থলি সাধারনত হংকং, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়।