আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটর চুরির সুযোগ নেই বলেই বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। কোন দল এলো না, এলো তাতে কিছু আসে যায় না। বিএনপি তো আসবেই না, ভোট চুরির সুযোগ পাবে না দেখে তারা নির্বাচনে আসে না। ২০০৮ সালে পারে নাই- যার জন্য তারা সব সময় নির্বাচন বাতিল করতে চায়, বর্জন করতে চায়। সেটা তাদের ইচ্ছা, যার যার দলের ইচ্ছা। তিনি বলেন অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা রুলস লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে যে দল তৈরি হয়েছে, সেই দল ভোটের কি বোঝে? তারা গণতন্ত্রের মানে বোঝে প্রশ্ন রেখে বলেন গনতন্ত্র বানান করতে বললে পারবে কি না সন্দেহ আছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়িসহ ৫টি জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। জনগণের ক্ষমতা আমরা নিশ্চিত করেছি, সেটা ধরে রেখেই আমাদের এগোতে হবে।
২০০১ সালের নির্বাচনে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল। যারাই নৌকায় ভোট দিয়েছিল তারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে; এই প্রত্যয় নিয়েই সংগ্রাম করেছি। অনেক সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের পার করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। তারপরও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসি। জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল ৭৫-এর পরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ।
তিনি বলেন, আমরা খাদ্যসেবা নিশ্চিত করি, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিই, শিক্ষার ব্যবস্থা করি, বিনামূল্যে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমরা এ দেশের রাস্তাঘাট-পুল ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নিই, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করি। ১৬০০ থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। কারণ, একটা বড় দেশ থেকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ছিল, আমি বলেছিলাম এটা জনগণের সম্পদ আমি বিক্রি করতে পারি না। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কত মানুষকে হত্যা করেছে তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের মা-বোনদের ওপর পাকিস্তানিরা যেভাবে নির্যাতন করেছে, সেভাবেই নির্যাতন করেছে। সেইসময় ফাহিমা, মহিমা, রুমা আত্মহত্যা করে নিজেদের ইজ্জত বাঁচান। এ রকম একটা তাণ্ডব শুধু নয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। পাঁচ বার দুর্নীতিতে তারা বিশ্বে এক নম্বর হয়েছিল। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাংলা ভাই, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, আমাদের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তার হিসাব নেই। আমরা নিজেই বারবার তাদের হাতে আক্রমণের শিকার হয়েছি। তারপরও আমরা কিন্তু দমে যাইনি। বরং এগিয়ে গিয়েছি। আমি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই, এত বাধা বিপত্তি, অত্যাচার, নির্যাতন, সবকিছু সহ্য করে নেতাকর্মীরা সংগঠনকে ধরে রেখেছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচনে দলের কেউ সংঘাত করলে রেহাই নেই’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই—জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবে। তারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। নির্বাচনে কোনো সংঘর্ষ বা মারামারি দেখতে চাই না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই নির্বাচনে দলের কেউ সংঘাত করলে তার রেহাই নেই। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সবসময় ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে না পারলে, বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। ভার্চুয়াল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের এমন কোনো জেলা নেই—যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আবার সরকার গঠন করতে পারলে প্রতিটি জেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হবে। কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ও নৌকার প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গতকাল বুধবার সিলেটে জনসভার মধ্যদিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করবেন, নিজের দলের মধ্যে ঐক্য রাখবেন। যেখানে যত প্রার্থী আছে; প্রার্থীরা একটু গণসংযোগ করুক, তাদের স্বাধীন মতো জনগণকে সুযোগ দেন; তাদের পছন্দমত প্রার্থীকে তারা পছন্দ করে নেবে, ভোট দেবে, তাতে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণ সাধন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি আর বিএনপির কাজটা কি? জ্বালাও পোড়াও অগ্নি সন্ত্রাস, এটাই তারা ভালো বোঝে এটাই তারা করে।
তিনি বলেন, এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কেননা সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদি সংগঠন হচ্ছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরির অপরাধে দুই দুবার এদেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল সেটা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল। আর মার্চে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঠিক একইভাবে তারা আবার ভোট চুরি করার চেষ্টা করেছিল ২০০৬ সালে। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করে সে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। পারে নাই।
কাজেই দু’দুবার যারা ভোট চুরির অপরাধে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়,ভোটের কথাও শুনতে হয় -এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার জনগণকে আওয়ামী লীগই দিয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। এবারে নির্বাচনে আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এ ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ করে কোন মানুষের ক্ষতি যেন কেউ না করতে পারে। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার।
আর হ্যাঁ আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি, আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীও রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবেন। যাকে খুশি বা যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবেন এবং সে জয়ী হয়ে আসবে। কেন না গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে।
এর যেন কোন ব্যতয় না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্যও এটা জরুরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান তেজগাঁও দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ, প্রার্থী, স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীবৃন্দ সংযুক্ত পাঁচ জেলার ভেন্যুতে উপস্থিত ছিলেন।