আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস, বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন, পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নাম প্রতিষ্ঠার মাইলফলকের দিন। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিন অপরাহ্ণে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বীর যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত, নিরীহ, নিরস্ত্র সাধারণ বাঙালির ওপর চালায় মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে। এর আগেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে হানাদারদের প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত হয় চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরাক্রমের কাছে মাথা নত করে পাকিস্তানি ঘাতক দল। পৃথিবীর বুকে অর্ধশত বছর আগের এই দিনে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালি ঊর্ধ্বলোকে তুলে ধরে প্রাণপ্রিয় লাল-সবুজ পতাকা।
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি সরকার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশের বিজয়ের এই দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ওই বছর থেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। সে মোতাবেক আজ সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন; সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জায় সজ্জিত, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোয় জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।
আজকের দিনে নতুন করে ফের বিজয় উল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে ছড়াচ্ছে বিজয়ের আনন্দ। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
ভোরে ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা ঘটবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানানো হবে।
মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন এবং দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘরগুলোয় বিনা টিকিটে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সকাল ৮টায় গণভবনে ডাক বিভাগের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন। বেলা সাড়ে ৩টায় তিনি বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।