দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষদেরকেও সরকার কথা বলতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘গুম-খুন-ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র উদ্যোগে আজ সকালে জাতীয় যাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মন্তুদ পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে তাদেরকে দাঁড়াতে দেয়নি, টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে দিয়েছে…। তাদেরকে কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে সরকার।’

‘আজকে গুম-খুন-মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। এক ভয়ংকর গুমের সরকার, ক্রসফায়ারের সরকার, মানবাধিকার লঙ্ঘেনের সরকার… রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে এমনভাবে টিকে থাকতে চায় যাতে তাদের অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দও করতে না পারে। এজন্য তারা বিস্তার করেছে এক ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক,’ বলেন তিনি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আসুন সাহস, আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করি। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী নাৎসীদের অন্তঃসারশূন্য অপপ্রচারের মায়াজাল ভেদ করে স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অক্লান্ত উদ্যম অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এই জাতি কোনোদিনই স্বেচ্ছাতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। গণতান্ত্রিক শক্তির কল্পনা ও আশা সর্বদা সজীব, সক্রিয় ও বিকাশশীল। তাই বর্তমান আদর্শের সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হবই।’

গত ৪ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসনকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নেয়ার ঘটনা উল্লেখ করে অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান রিজভী।

সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এ মুখপাত্র জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং পাঁচটি মামলায় আরো পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

‘বর্তমান আইজি প্রিজন দলবাজ’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমানে যে আইজি প্রিজন আছেন, তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সব বন্দীকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখতে মৌখিকভাবে সব কারাগারে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এর আগে কয়েকবার বলেছি, আইজি প্রিজন এমন এক মানুষ যিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের অবস্থান আরো দৃঢ় করার জন্য শপথ নিয়েছেন যে, কারাগারের ভেতরেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের তিনি জুলুম করবেন, নির্যাতন করবেন এবং সাধারণ মানুষ হিসেবে বন্দীদের যে মানবাধিকার সেটিকে চরমভাবে লঙ্ঘন করবেন। আজকে তিনি সারাদেশের কারাগারগুলোতে আরেকটি হিটলারের গ্যাস চেম্বার বানিয়েছেন, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প করেছেন…. আজকে কারাগারগুলোতে নাৎসীদের মতোই অবস্থা চলছে। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিপীড়ন-নির্যাতনে বিপর্যস্ত।’

‘এমনকি কারাগারের সেলগুলোর বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও কাপড়-চোপড় দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে, মোবাইলে কথা বলা একেবারে সীমিত করা হয়েছে, মানে দিতেই চায় না। নিয়ম হয়েছে যে, সপ্তাহে এক দিন মোবাইলে আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলতে পারবে আর ১৫ দিন পরে দেখা-সাক্ষাৎ, আগে যা ছিল প্রতি সপ্তাহে।’

তিনি বলেন, ‘এই নিপীড়ন নজিরবিহীন। এই নিপীড়ন ভাষায় বলা যাবে না। অতি উৎসাহী অফিসারেরা দলীয় বন্দীদের ওপর একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘সরকারি তিতুমীর কলেজ হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ হোসেন ডিবি পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারের ভেতরে হাঁটাচলা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে কারণে পায়ের হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছে না, মাথায় আঘাত করার কারণে মাথায় প্রচণ্ডরকম ব্যাথা অনুভব করছে এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ অবস্থার পরও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।’