সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান ৮৩ বছর বয়সী এই সাংবাদিক, রাজনীতিক ও আইনজীবী। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের একান্ত সচিব ওয়াহিদুজ্জামান জানান, মরহুমের প্রথম জানাজা রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বারিধারা জামে মসজিদে এবং দ্বিতীয় জানাজা বাদ জোহর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে।
নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ছাত্রজীবনে স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান।
১৯৬৫ সালে তিনি হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে মইনুল হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইনস্টিটিউটেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালে বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ইত্তেফাক সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ইত্তেফাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হন।
একই বছর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আসন থেকে নির্বাচিত হন মইনুল হোসেন।
রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে উদার ও স্বাধীন মতামত রাখার জন্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ‘নিউ নেশন’ নামে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন, যা পরবর্তীকালে দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। তিনি বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম গঠিত প্রেস কমিশনেও তাকে সদস্য করা হয়। প্রেস কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১/১১-এর পর মইনুল হোসেন এক বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ : বাস্তবতা ও প্রত্যাশা’, ‘গণতন্ত্রের সাফল্য চাহিয়াছি’, ‘ঘুরে দাঁড়াতে হবে’, ‘আমার জীবন আমাদের স্বাধীনতা’, ‘বাংলাদেশ : কি চেয়েছি, কি পেয়েছি’, ‘অবিস্মরণীয় মানিক মিয়া’ প্রভৃতি।