ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, গাজায় যুদ্ধে করতে এসে এখন পর্যন্ত সক্ষমতা হারিয়েছে দুই হাজার ইসরাইলি সৈন্য।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে ইসরাইলি গণমাধ্যম সূত্রে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, গাজায় যুদ্ধে করতে এসে এখন পর্যন্ত সক্ষমতা হারিয়েছে দুই হাজার ইসরাইলি সৈন্য। এছাড়া আহত হয়েছে আরো পাঁচ হাজার সৈন্য। নিহত হয়েছে অন্তত ৪২০ জন।
এদিকে, গাজায় ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। এর প্রতিবাদে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
জাতিসঙ্ঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস এবং আরব দেশগুলোর নেতৃত্বে অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ ওয়াশিংটনের ভেটো প্রদানের মাধ্যমে অকার্যকর করে দিয়েছে।
আমেরিকান দূত রবার্ট উড বলেছেন, রেজোলিউশনটি ‘বাস্তবতা থেকে ভিন্ন’ এবং এতে ‘সেখানে লক্ষ্য অর্জিত হবে না।’
দ্রুততার সাথে এবং একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান অপরিবর্তিত রেখে আনা এই প্রস্তাবের জন্য তিনি রেজোলিউশনের পৃষ্ঠপোষকদের সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রবার্ট উড বলেন, ‘এই রেজোলিউশনে এখনো একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান রয়েছে। এটি হামাসকে ৭ অক্টোবর যা করেছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে সক্ষম করে দেবে।’
এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের অপরাধের বৈধতা দিয়ে যাবে, ততদিন এই অঞ্চলে স্থিরতা আসবে না। বরং বড় ধরণের বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েই যায়।
এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর ১ ডিসেম্বর থেকে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। একে বৈধতা দেয়ার জন্য ইসরাইল দাবি করেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির আইন লঙ্ঘন করেছে। এ ব্যাপারে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইসরাইলের এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
হামাস পরিচালিত গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে গাজায় ১৭ হাজার ৪৮৭ জনেরও বেশি লোক মারা যাওয়ার পর গুতেরেস জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন।
রেজুলেশনটি স্পনসর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি বলেছেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত গভীরভাবে হতাশ।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় এই কাউন্সিল মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানাতে অক্ষম।’
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে, ওয়াশিংটন যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে, স্থায়ী সদস্য বৃটেন এই রেজোলিউশনে ভোটদানে বিরত থাকে এবং অপর ১৩ সদস্য পক্ষে ভোট দেয়।
জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ‘যদি আপনি এটি (এই যুদ্ধ) সমর্থন করেন তবে আপনি মানবতাবিরোধী অপরাধকে সমর্থন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এটি নিরাপত্তা পরিষদের জন্য একটি ভয়ানক দিন।’
ইসরাইল ওয়াশিংটনের ভেটোর প্রশংসা করেছে, দেশটির জাতিসঙ্ঘের দূত গিলাদ এরদান তাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ভোটের আগে গুতেরেস বলেছেন, ‘ইসরাইলে হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে কখনই সমর্থন করতে পারে না।’
ইসলামপন্থী আন্দোলনকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করে ইসরাইল অবিরামভাবে গাজায় নজিরবিহীন বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান শুরু করে। এখন তারা দক্ষিণ ইসরায়েলে ভয়ঙ্কর হামলা চালাচ্ছে।
সূত্র : আল জাজিরা