বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীর এত ক্ষমতা, সাহস আত্মম্ভরিতা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনলে তিনি আতকে উঠেন। বলতে চাই যদি সাহস থাকে সন্ত্রাসীদের মতো হুংকার বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিন, ভোটাররাই ফায়সালা করবে।

সোমবার বিকেলে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নরসিংদীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে নিয়ে যে হুংকার দিয়েছেন তা শুনে হতবাক এবং আতঙ্কিত দেশের মানুষ। তিনি বলেছেন,‘আরে ব্যাটা তোর যদি সাহস থাকে তাহলে বাংলাদেশে ফিরে আয়, আমরা একটু দেখি।’ ইসরাইলের……কি না আমার জিজ্ঞাসা। পালিয়ে থাকে লন্ডনে। ওখান থেকে আগুন জ্বালাতে বলে। অগ্নিসন্ত্রাসী যাকে যেখানে পাবেন, ধরেন। ধরে আগুনে ফেলে দেবেন। বিএনপি হচ্ছে সন্ত্রাসীদের দল। বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস যুগ যুগ ধরে মানুষ দেখেছে।’ গত ২ নভেম্বর শেখ হাসিনা সংসদে দাড়িয়ে বিএনপি নেতাদের জানোয়ার বলেছেন। গতকাল শেখ হাসিনা আরো অনেক কথা বলেছেন, যা কেবল মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব। উনার বাক্যদূষণ’ ইদানিং প্রায় মহামারীর পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকল রীতিনীতি, শিষ্টাচার, সুরুচি ও সভ্যতাকে তোয়াক্কা না করে লাগামছাড়া, উস্কানিমূলক, অসংলগ্ন ও ভারসাম্যহীন-জিঘাংসা মুলক-নিকৃষ্টতম ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। এটা কি কোনো সভ্য দেশের সরকার প্রধানের মুখের ভাষা হতে পারে? মনে হয়েছে গলির সন্ত্রাসী মাস্তানের হুংকার। বস্তির অশিক্ষিত বোহেমিয়ান গালিবাজদের খিস্তি। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, এই ধরনের মানুষ এখন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার দখল করে বসে আছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর কথা-বার্তায় শালীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। ‘তুই তোকারি’ আর গালিগালাজ করে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন তিনি। মনোবিজ্ঞান বলে, বাচালতা মানসিক ব্যাধি। দুই কারণে এ ব্যাধিতে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। প্রথমত আনন্দের আতিশয্যে। এত আনন্দিত যে তার মানসিক অবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে দ্বিতীয়ত প্রচণ্ড হতাশা, ভয়-আতঙ্ক এবং দুঃখ থেকে। শেখ হাসিনা তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে যে কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ‘সাহস থাকলে দেশে আয় ব্যাটা’।
এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো যে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শে অসংখ্য গুম, বিচার-বহির্ভুত হত্যা, চোখ বাধাঁ মানুষের দীর্ঘ সারি এবং ফাসিতে ঝোলানোর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রয়েছে তিনি ক্ষমতায় থাকতে তারেক রহমান দেশে আসলে শেখ হাসিনার রক্ত পিপাসু মন কোনো পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে সেটি জনগণ সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারছে। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জনপদের পর জনপদ রক্তে পিচ্ছিল করেছেন। বাহান্ন তেকে নব্বই পর্যন্ত আসংখ্য আত্মত্যাগ এখন একনায়কের দড়িতে ঝুলছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারেক রহমানের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব, অভাবনীয় জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতায় গড়ে ওঠা প্রত্যয়-দৃঢ় নেতৃত্বে আতংকিত, সন্ত্রস্ত। তার নেতৃত্বে এখন দেশে যে গণ-জাগরণ উঠেছে তার ভিত্তিতে চলছে দুর্বার একদফা আন্দোলন। গণধিকৃত এই নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার পালানোর পথ খুঁজছে । শয়নে জাগরণে তারেক রহমানের ভয়ে অস্থির হয়ে প্রহর গুনছে। আর ভয়ে আতংকে প্রলাপ বকছে, আর আর্তনাদ করছে। এই বক্তব্য শুনে মানুষ হত-বিহ্বল ও বোবা হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে এমন বক্তব্য কেবল শপথভঙ্গ নয়, আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। সরাসরি প্রাণ-নাশের হুমকি। তিনি রাষ্ট্র সমাজে সম্প্রীতি দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে তৈরি করেছেন বিভেদের বিভিষিকা। বাংলাদেশের মানুষ এই সব বক্তব্যের বিচার একদিন করবে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগুনে নিক্ষেপ করতে প্রধানমন্ত্রীর সহিংস হুংকারে দেশের গনতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ আতংকিত। তিনি দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চান। তার বক্তব্য শুনে বোঝা যাচ্ছে তিনি নিজেই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর পুরো আস্থা রাখতে পারছেন না। এ কারণে শর্টগান, হাতুড়ি-চাপাটি-লগি-বৈঠাধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন ভোটাধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনরতদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করতে। শেখ হাসিনা অতীতেও একটার বদলে ১০টি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নদীতে ফেলে হত্যার হুমকী দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এখন বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে পুরে স্বস্তি পাচ্ছেন না। যারা রাজপথে আছে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিচ্ছেন। ‘শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা এবং জিঘাংসা চরিতার্থ করার হীন মনেবৃত্তি ফুটে উঠেছে তার কর্কষ কন্ঠে ‘আরে ব্যাটা তোর যদি সাহস থাকে তাহলে বাংলাদেশে ফিরে আয়, আমরা একটু দেখি, হুংকারে। এতে জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, তারেক রহমানকে তিনি হত্যা করতে চান। এজন্য একটির পর একটি মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে সাজা দিয়েছেন। জনগনের বিজয় অর্জনের পরে তারেক রহমান অচিরেই দেশে ফিরবেন। আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন আয়োজনে উন্মত্ত এখন। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, আন্তর্জাতিক মহলের চাপে দিশেহারা হয়ে গেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে হামলা, পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা, পুলিশ হাসপাতালে গাড়িতে আগুনের এই সব ঘটনা নিজেদের এজেন্ট দিয়ে পরিকল্পিত উসকানি তৈরি করে, সমাবেশে এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।’ জনগণের অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপুলে মহাসড়কে চিনিভর্তি ট্রাকে আগুন দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সদর উপজেলাধীন ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি নুর উদ্দিন টিপুকে গ্রেফতারে প্রমাণিত হয় অতীতের মতো আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস নাশকতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। নিজেরাই ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা-ভাংচুর, সহিংসতা করে পুরানো কায়দায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। দুঃশাসনে পিষ্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে দলীয় ও রাষ্ট্রশক্তিকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের নিশ্চিত ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আবারো উদ্ভট, বানোয়াট, আজগুবি মামলার প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে। সরকারের মত পুলিশরাও এখন গায়েবি তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। কবরে শায়িত লাশের নামে, ওমরাহ পালনকালে সেই ব্যক্তির নামে, হাসপাতালে শায়িত পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির নামে, প্রবাসীর নামে, কারাবন্দি নেতাদেরকেও মামলার পাইকারী আসামি করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকার টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। আইন-আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই শেখ হাসিনার হুকুমের দাসে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক সর্বমহলে সুপরিচিত অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ইন্তেকাল করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে। ১ বছর আগে মারা গেছেন রামপুরা থানার ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: নাসির রহমান। মাস কয়েক আগে সানাউল্লাহ মিয়ার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে তার পরিবার। অথচ ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে মৌচাকে পুলিশের ওপর ককটেল ছুড়ে নাশকতা মামলার আসামি হয়েছেন মরহুম অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। সানাউল্লাহ মিয়া কোনো সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। সানাউল্লাহ মিয়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ তাকে চিনেন। রামপুরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো: আব্দুর জলিল এ মামলাটি করেন। মামলায় ২৪১ জন আসামির মধ্যে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে ২২৬ নম্বর আসামি করা হয়। আর মরহুম মো: নাসির রহমানকে এজাহারে ৮৮ নম্বর আসামি দেখনো হয়। মিথ্যা মামলা করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগের দলদাস মামলাবাজ পুলিশ। মামলার তাণ্ডব আর গ্রেফতার বাণিজ্যে অন্ধ হয়ে গেছে প্রশাসন। আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা বন্ধের আহ্বান জানান রিজভী।