জমি দখল, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, নিজ দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগ উঠেছে পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন মালিথার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার নেতৃত্বে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, জেলা জুড়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগে জানা যায়, গত সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে পাবনা সদরের ছাতিয়ানী এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক জাহিদ মালিথার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন মালিথার নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালায় তার সমর্থিত একদল যুবক। এ সময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িটিতে এলোপাথাড়ি ভাংচুর চালায় তারা। এ হামলায় আতংক ছড়িয়ে পরে স্থানীয়দের মাঝে।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক জাহিদ মালিথা বলেন, ‘জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আল আমিন মালিথা স্থানীয় ছাত্রদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে জোর করে মিছিলে নিয়ে যায়। কেউ কাজে বের হলে তাকে কাজ বাদ দিয়ে মিছিলে যেতে চাপ দেন। এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা সহ নানা অপকর্মে জড়িত আল আমিন মালিথা। এসবের প্রতিবাদ জানাই এলাকার মুরুব্বীসহ আমরা। আর প্রতিবাদ করার কারনে গত সোমবার আমার বাড়িতে সে অস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে।’
অভিযুক্ত আল আমিন মালিথার চাচা আইনুল মালিথা বলেন, ‘তার বাড়ির সাথে আমার বাড়ি। সেখানে আমি বাড়ি করার জন্য ইট খোয়া এনেছি। এখন সে আমাকে বাড়ি করতে দিচ্ছে না। মিস্ত্রিরা কাজ করতে এসেছিল। আল আমিন মালিথা বলেছে, কাজ শুরু করলে হাত কেটে দিবে। কারণ সে আমার জায়গা দখলে নিবে। আমি এখন গোয়াল ঘরের মতো বসবাস করছি তার অত্যাচারে।’
এদিকে, হামলার নেতৃত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আল আমিন মালিথা। তবে তিনি দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ মালিথা উপর। তিনি বলেন, ‘জাহিদ আমার সমর্থকদের হুমকি দিয়েছে মিছিল মিটিং করা না করার জন্য। এটাকে কেন্দ্র করেই ঘটনা। আমি ঘটনার সাথে জড়িত নই এটা বলবো না। আমি ছিলাম। যেহেতু ভিডিওতে আমাকে দেখা যাচ্ছে। এটাতো আমি অস্বীকার করতে পারি না।’
এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু বলেন, ‘এটা দু:খজনক ঘটনা। নিজ দলের লোকজনের মধ্যে বিরোধে জড়ানো তার ঠিক হয়নি। আল আমিন মালিথার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। তিনি যদি অতি উৎসাহী হয়ে এই কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, ‘ঘটনাটি পুলিশের নজরে এসেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। তবে অভিযুক্তকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। যারাই এর সাথে জড়িত থাকুক, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জাহিদ মালিথা বাদি হয়ে মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেখানে আল আমিন মালিথা সহ ৬ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরো ৬ থেকে ৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, ’অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৮। তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’