বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের মধ্যেই বেতন বাড়ানোর দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মতো রবিবার গাজীপুরে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাংচুর করেছে, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। তারা পুলিশবহনকারী একটি পিক-আপে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন গত সোমবার শুরু হয় কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কয়েকটি কারখানায়। এরপর দিন যতো যাচ্ছে শ্রমিকরা ততোই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। শ্রমিকদের এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়।
পুলিশ, কারখানা শ্রমিকর ও স্থানীরা জানান, রবিবার সকালে মহানগরীর কাশিমপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। পরে শ্রমিকেরা এসময় বেশকিছু ভাংচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর বেলা ১১ টার দিকে মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ। স্টান্ডার্ড কারখানা ও কোনাবাড়ি বিসিকের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। তারা দলবল নিয়ে মহাসড়ক টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এসময় তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। এসময় কোনাবাড়ি এলাকায় পুলিশ বহনকারী একটি পিক আপে আগুন দেয় উত্তেজিত শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিক অসন্তোষ ঘটনায় দায়িত্ব পালন করতে আসা শিল্প পুলিশ সদস্যদের বহন করা একটি পিক আপ কোনাবাড়ি এলাকার এসে দাঁড়ায়। পুলিশ সদস্যরা নেমে গেলে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ওই পিক আপটি। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ওই পিক আপ উল্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে সকালে শ্রমিকরা নাওজোড় এলাকা থেকে মিছিল সহকারে একই মহাসড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তারা ভোগড়া এলাকার ঢাকা বাইপাস হয়ে মোগরখাল পৌঁছে। এ সময় ওইসব এলাকার কারখানা থেকে আরো শ্রমিক তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। মোগরখাল এলাকায় টিএসজেড কারখানার সামনে পৌঁছলে শিল্প পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। এসময় শ্রমিকরা বাধা ডিঙ্গিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে। পরে লাঠিচার্জ এবং কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। বহিরাগত শ্রমিকদের ভাংচুরের আতংকে বেশ কিছু কোনাবাড়ি, নাওজোর, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, বাইপাস এলাকার সকল পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে দেয়।
স্টান্ডার্ড কারখানা শ্রমিক জুয়েল মিয়া বলেন, আমাদের বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ কোন আলোচনা করেনি৷ আমাদের বেতন ২৩ টাকা এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম জানান বলেন, বিভিন্ন করাখানার শ্রমিকরা মোগরখাল এলাকায় ঢাকা বাইপাস সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে গেলে ইট পাটকেল ছুড়া শুরু করে। পরে লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শ্রমিকদের ছুড়া ইটের আঘাতে নাহিদ নামে শিল্প পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌধুরী বাড়ি এলাকায় শ্রমিকরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত মহাসড়কে চলাচলকারী কয়েকটি যানবাহন কাঁচ এবং পেগাসাস ফ্যাক্টরীসহ কয়েকটি ভবনের কাঁচ ভাংচুর করা হয়। পুলিশ ধাওয়া করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, আজকেও শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। পরে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মঈনুল হক জানান, শ্রমিকেরা আন্দোলন করে মহাসড়ক অবরোধ করে। উত্তেজিত শ্রমিকেরা মহাসড়কে ভাংচুর ও ইটপাটকেল ছুঁড়লে আমরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।