সফলভাবে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম চালুর পর এবার দ্বিতীয় ইউনিটেরও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার। রোববার (২২ অক্টোবর) সকাল ৬টা ১৮ মিনিট থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন চালু হয়েছিল। দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদনের ফলে দেশের বেসরকারি মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিটই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুর করল। জাতীয় গ্রিডের চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে ১৯ অক্টোবর সরেজমিনে প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেছেন পিডিবির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন পিডিবি ঢাকার প্রধান প্রকৌশলী এবিএম জিয়াউল হক, কোল পাওয়ার জেনারেশনের পরিচালক রুকন উদ্দিন, একই সংস্থার উপ-পরিচালক নাজমুল হক, পিডিবির উপ-সচিব (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) নাজমুল হুদা, পিডিবি ঢাকার সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এনার্জি অডিটিং) তামিম খান, ডিরেক্টরেট অব কোল পাওয়ার জেনারেশনের (ডিসিপিজি) সহকারী প্রকৌশলী সানজিদা পারভিন, পিডিবি ঢাকার পরিচালক (ডিজাইন অ্যান্ড ইন্সপেকশন-২) মো. শহীদুল ইসলাম, পিডিবি ঢাকার এনার্জি অডিটিং ইউনিটের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল হোসাইন সেরাজী ও অন্যান্যরা।
এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইবাদত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “এটি আমাদের জন্য বেশ আনন্দের খবর। পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় আমরা এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পেরেছি। এখন এই পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ইউনিটই প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যুক্ত করতে পারছে। পিডিবির প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে সরেজমিনে প্ল্যান্টের কার্যক্রম দেখেছেন। তারা ঢাকায় ফিরে আমাদের কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট (সিওডি) সনদ দেবেন। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি বাস্তবায়নও শুরু হবে।”
প্রসঙ্গত, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বাঁশখালীর এই কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। বিদ্যুকেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। গত ২৪ মে প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় এবং দ্বিতীয় ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যায় ২৮ জুন।
চট্টগ্রাম ভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজি এর যৌথ মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার অর্থাৎ ২৮ হাজার কোটিরও ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের অংশীদারিত্বে পরিমাণ ৭০ শতাংশ এবং বাকি ৩০ শতাংশের মালিকানায় রয়েছে চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজি।
সেপকো থ্রি ‘বিশ্বের জন্য একটি চীনা গ্লোবাল পার্টনার’বিদ্যুত খাতে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব সহ একটি বিখ্যাত ইপিসি কোম্পানি। এটি এসএস পাওয়ার-১প্ল্যান্টের ইপিসি গ্রহণ করেছে এবং উক্ত সময়সীমার মধ্যে উচ্চ মানের পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি চালুর ফলে স্থানীয় শিল্পকারখানার প্রসার, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নতির পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়ও নতুন মাত্রা যুক্ত হবে- এমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যান্য পাওয়ার প্ল্যান্টের তুলনায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে সাশ্রয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এটি পুরোপুরি উৎপাদনে থাকলে দৈনিক প্রায় ২.৯৩ কোটি ইউনিট ও মাসে প্রায় ৮৮ কোটি ইউনিটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর ২০১৬ সালে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। এরপর কার্যক্রম শুরুর পর অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় খুব দ্রুতই সফলভাবে পুরোপুরি উৎপাদনে এসেছে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট।